ছাত্রলীগকে ওবায়দুল কাদেরের কড়া নির্দেশনা, করলেন রসিকতাও

ওবায়দুল কাদের
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কাউকে নেতা না বানাতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কার বলতে চাই, খারাপ ছেলেমেয়েদের আমাদের কোনো দরকার নেই। যাদের নামে বদনাম, যাদের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, সিট–বাণিজ্য ও মাদকের মানসিকতা, তাদের পরিহার করতে হবে। অনেক দিনের গলিত-পচা জিনিস এখনো রয়ে গেছে। এই পচা-গলিত অংশটা বাদ দিতে হবে। সার্জারি করে বিষফোড়াটি বের করে দিতে হবে।’

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে এসব নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ মঞ্চে ছিলেন। এসব কড়া নির্দেশনার পাশাপাশি গত ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভেঙে পড়ার ঘটনা নিয়ে রসিকতাও করেন ওবায়দুল কাদের।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে ছাত্রলীগকে নিয়ে আমরা যারা গর্ব করি, আমাদের রাজনীতির হাতেখড়ি যে ছাত্রলীগের মাধ্যমে, সেই ছাত্রলীগের নামে মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে...। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কাউকে নেতা বানানো যাবে না। এই ছাত্রলীগের কাছে আমরা অনেক আশা করি, আমাদের নিরাশ কোরো না। আমাদের আশার প্রদীপ যেন নিভে না যায়।’ তিনি বলেন, যাঁরা খারাপ, তাঁরা সংশোধন না হলে, বের করে দাও। যে কমিটি কাজ করে না, চাঁদাবাজি-দখল ও মাদক নিয়ে ব্যস্ত, সেই কমিটির কোনো প্রয়োজন নেই। ছাত্রলীগের নামে অপকর্ম করে বহিষ্কারের কিছুদিন পর আবার বহিষ্কারাদেশ উঠে যায়। এদের স্থায়ী শাস্তি দিতে হবে। শুধু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নয়, এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে হবে, জেলে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে তোমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলবে।

ছাত্রলীগে অনেক দিনের ‘গলিত-পচা জিনিস’ এখনো রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সার্জারি করে বিষফোড়াটি বের করে দিতে হবে। এতে ছাত্রলীগের কোনো ক্ষতি হবে না। ভালো ছেলেমেয়েরা থাকলে আরও ভালো ছেলেমেয়েরা ছাত্রলীগের প্রতি আকৃষ্ট হবে। এটা যেন সবার মনে থাকে। ইদানীং এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা শুনলে আমাদের ছাত্রলীগের প্রাক্তনদের লজ্জা লাগে। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! এমন কেন হচ্ছে? কোথাও কোথাও লাগামছাড়া হয়ে গেছে কেউ কেউ। এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।’

গত ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভেঙে আহত হয়েছিলেন ওবায়দুল কাদেরসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সাবেক-বর্তমান নেতা। সেই প্রসঙ্গ তুলে রসিকতা করে আজ কাদের বলেন, ‘এই আয়োজনটি (বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভা) টিএসসি মিলনায়তনে না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হলে ভালো হতো। সবাই ভয় পেয়ে গেছে, একদিন স্টেজ (মঞ্চ) ভাঙছে; মনে করছে, আমি ওখানে গেলে আবার যদি ভাঙে (হাসি)! (হাসতে হাসতেই) সে জন্য ভয় পায়। ভয় পাওয়ার দরকার নেই। স্টেজ ভেঙে গেছে, দুই পা রক্তাক্ত। আমি কিন্তু তখনো দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি। আমি কাউকে বুঝতেই দিইনি যে আমার কোনো ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক বেশি। পাঁচবার আমাকে হাসপাতালে গিয়ে ড্রেসিং করতে হয়েছে। আমি তো আর সে কথা বলিনি! তাই বলে কি স্টেজ হবে না? হবে। সবাই কেন স্টেজে? যাঁরা ওঠার, তাঁরা উঠবেন৷...কখন কোন ওয়ার্ড শাখার সম্পাদক, তিনিও স্টেজে উঠে গেছেন। এক ছেলেকে পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। কয়, আমি সাবেক নেতা। কী করে হলে সাবেক নেতা? বললেন, রামপুরার কোন ওয়ার্ডের সেক্রেটারি ছিলেন। এ রকম সাবেক নেতা যদি মঞ্চে ওঠেন, তাহলে পাথর দিয়ে মঞ্চ বানালেও এটা টিকবে না৷’

বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, কোথায় গেল লম্ফঝম্ফ, কোথায় গেল আন্দোলন! সব থেমে যাবে। তোমরা (ছাত্রলীগ) শুধু একটু ঠিক থেকো। ভালো কাজের মধ্যে একটা অঘটন ঘটাইয়ো না। শেখ হাসিনার ভালো কাজগুলোকে একটা খারাপ কাজ দিয়ে ম্লান করতে যেয়ো না। তোমাদের কাছে এটা বিশেষ অনুরোধ। আশা করি, অবিলম্বে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কাজ পাবে।