অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলছে, দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত

‘রাষ্ট্র-সংবিধান সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবেছবি: দীপু মালাকার

অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলছে—এই মন্তব্য এসেছে ঢাকায় এক আলোচনা সভায়। আলোচকেরা বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে পারছে না। অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। ফলে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেওয়া।

আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘রাষ্ট্র-সংবিধান সংস্কার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সিরাজুল আলম খান গবেষণাকেন্দ্র।

অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে অভিযোগ করে আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রদের রাজনীতিতে সুযোগ করে দিতে চান। প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, ছাত্ররা এত ত্যাগ করেছে, তাদের প্রাপ্তি দিতে হবে। অথচ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধে, উনসত্তোরের গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্ররা ভাগ চায়নি। সংবিধানের বাইরে গিয়ে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।’

অন্তর্বর্তী সরকারের এখন রাজনীতি ভালো লাগে না বলেও মন্তব্য করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে, এত সমস্যা, সবাইকে ডাকেন। এই সরকার ব্যর্থ হলে এবং মার্শাল ল (সামরিক শাসন) আসলে বিপদ রয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, এই সরকার ঢাকা শহরে ট্রাফিক সিস্টেম ঠিক করতে পারে না। চালের দাম কমাতে পারে না। ডালের দাম কমাতে পারে না। বিদ্যুতের দাম কমাতে পারে না। উল্টো আরও ভ্যাট বসাচ্ছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে না। এ কারণে বলা হচ্ছে, এ সরকার পারবে না। এ কারণে বলা হচ্ছে, যথেষ্ট হয়েছে। আপনারা এখন নির্বাচন দেন।

আবদুস সালাম বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলতেন, ভোট কেন দেবে—ভোট দিলে তারেক রহমান এসে দেশ চালাবে। এখন এই সরকার বলে ভোট কেন দেবে, ভোট দিলে তো বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। হাসিনাও চেয়েছে বিএনপি ঠেকাও, এই সরকারও বলছে বিএনপি ঠেকাও। সরকারকে জনগণের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি।  আওয়ামী লীগ শাসনামলের অপরাধীদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আবদুস সালাম বলেন, এখনো বিচার শুরু হয়নি। এখনো মাফিয়ারা দেশ চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, এঁরা ক্ষমতার স্বাদটা খুব ভালো করে পেয়ে গেছেন। ক্ষমতা আর ছাড়তে চান না। সে কারণে তাঁদের মুখে সংস্কার, অন্তরে ক্ষমতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট, গণহত্যাকে চিহ্নিত করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জাতীয় ইতিহাস, সংস্কৃতিকেও কটাক্ষ করা হচ্ছে।

সভায় অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিল, রাজাকার–আলবদর–আলশামস বাহিনী গঠন করে যারা বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করেছিল, তাদেরকে নিয়ে ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক)—সেটি অন্তর্ভুক্তির মধ্যে পড়ে না। এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশে হবে না।

নির্বাচিত সরকারের বিকল্প এ ধরনের অনির্বাচিত সরকার নয় বলে মন্তব্য করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, কাজেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে এই সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক। আর ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল করবেন না। ইউনূস সরকার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করলে নির্বাচনের সময় একটা নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।

এই আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন সিরাজুল আলম খান সেন্টার ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান রায়হানুল ইসলাম। সিরাজুল আলম খান সেন্টারের পরিচালক মোশারেফ হোসেন ও সদস্য মাহতাব বিশ্বাসের সঞ্চালনায় সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অনেকে বক্তব্য দেন।