ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ এখন গুপ্তহত্যার রাজনীতিতে: জোনায়েদ সাকি

প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলন আজ রোববার সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়ছবি: প্রথম আলো

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানোর জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশকে সহিংসতা ও দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে শাসন করতে চেয়েছিল। ক্ষমতা হারিয়ে তারা দেশ ছাড়লেও গুপ্তহত্যার রাজনীতি এখনো চালিয়ে যাচ্ছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।

এরপর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার পর জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টরা পরিকল্পিতভাবে গণ–অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছে। তারা কিলার বাহিনী নিয়োগ করে সারা দেশে একটা অরাজকতা, আতঙ্ক তৈরি করছে।

ওসমান হাদির ওপর হামলা এই চক্রান্তের অংশ দাবি করে সাকি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আরও অনেক প্রার্থী, রাজনৈতিক নেতাদের হামলা করতে চায়, হত্যা করতে চায়।

জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তিগুলোর নিজেদের দলীয় স্বার্থকে সামনে আনার ফলে দেশে ষড়যন্ত্রকারীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দেন তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সবকিছু হচ্ছে দেশে অভ্যুত্থানের যে অর্জন, গণতান্ত্রিক যে উত্তরণের প্রক্রিয়া, বিচার, সংস্কার, নির্বাচন এটাকে ব্যাহত করা। পতিত আওয়ামী লীগ একদিকে চেষ্টা করছে, অন্যদিকে কোনো কোনো পক্ষ–মহলের এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া। অথচ জনগণের আকাঙ্ক্ষা সংস্কার, সেটা বাস্তবায়ন করতে গেলে নির্বাচন অপরিহার্য। এটাই এখন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ।

মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার বাস্তবতা থেকেই গত বছর জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানকারী শক্তিগুলোর মধ্যে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য না থাকলে চক্রান্তকারীরা সফল হবে।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, অনেকেই একাত্তর সালকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে, যেন চব্বিশ একাত্তরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মোটেই তা নয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা একাত্তরের আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিকতা। যারা মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়, তারা আসলে গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাইরে চলে যেতে চাইছে। এটা বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।

সাইফুল হকের নেতৃত্বে আজ রোববার সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
ছবি: সাইফুল হকের ফেসবুক পেজ।

নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা মাথাচাড়া দিচ্ছে: সাইফুল হক

শেখ হাসিনার উগ্র স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটলেও দেশে নতুন ধরনের জবরদস্তি ও ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এই মন্তব্য করে বলেন, এতে বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ছে।

সাইফুল হক বলেন, সাম্যভিত্তিক, বৈষম্যহীন ও মানবিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়েই বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়া গেলেও বাস্তবে দেশটি ক্রমে উল্টো পথে হাঁটছে। পাকিস্তান আমলের মতো দেশে দুই অর্থনীতি ও দুই সমাজ গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের অসম্পূর্ণ জাতীয় কর্তব্য সম্পন্নের আকাঙ্ক্ষায় ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান হয় মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, কিন্তু অভ্যুত্থানের পর যাঁদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। একটি স্বৈরতন্ত্র বিদায় নেওয়ার পরও নতুনভাবে ধর্ম কিংবা মতাদর্শের নামে জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সাইফুল হক বলেন, বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে বড় পথ হচ্ছে নানা মতপার্থক্যের মধ্যেও ঐক্যটাকে ধরে রাখা। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে লড়াই, সেই লড়াইটা এগিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা।