কর্মসূচি দেবে খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি ও এবি পার্টি যুগপতে নেই

অবিলম্বে জুলাই সনদের বাস্তবায়নসহ চার দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। আজ রোববার বেলা ১১টায় খেলাফত মজলিস, আগামীকাল সোমবার ইসলামী আন্দোলন এই সংবাদ সম্মেলন করবে।

এদিকে চার দাবিতে আট দলের যুগপৎ কর্মসূচি–বিষয়ক খবরকে বিভ্রান্তিকর বলছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

প্রসঙ্গত, ‘চার দফা দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে জামায়াত, এনসিপিসহ আটটি দল’ শিরোনামে গতকাল প্রথম আলোতে একটি খবর প্রকাশিত হয়।

এর উল্লেখ করে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো কোনো জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তা মিস লিডিং। এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের যে দাবি, সেটির সঙ্গে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পূর্ণ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপির কোনো অবস্থান নেই। বরং এনসিপি শুধু উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে একমত। এ ছাড়া সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের দাবির সঙ্গে এনসিপির সমর্থন থাকবে।’ আদীবের এই পোস্ট নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

এদিকে চার দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচিতে যাওয়ার সংবাদকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তাঁরা এক বিবৃতিতে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবির বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে এবি পার্টির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে, যা নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচির ধারাবাহিকতা। নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে এবি পার্টি নির্বাচনে মিশ্র পদ্ধতির (সংখ্যানুপাতিক হারে এক শ আসন, বাকিটা প্রচলিত পদ্ধতি) ব্যাপারে ঐকমত্য কমিশনে মতামত প্রদান করেছে। এবি পার্টি শুধু পিআর সাপেক্ষে উচ্চকক্ষের বিষয়ে একমত। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দাবিকে এবি পার্টি সমর্থন করে। কোনো রাজনৈতিক জোট কিংবা যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তারা দলীয়ভাবে জানাবে।

নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, জোটবদ্ধ হয়ে কারও সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

যদিও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এ বিষয়ে গতকাল শনিবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন না করে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করেই যেনতেন উপায়ে নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবারও পুরোনো অশুভ আবর্তে নিক্ষেপ করার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় স্বৈরাচারবিরোধী সব রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তি একত্রিত হয়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘আমাদের দাবি সুস্পষ্ট। আমরা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই, এর আইনি ভিত্তি চাই। দ্রুততার সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন বন্ধ করতে চাই। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। আমাদের অবস্থান কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। বরং জুলাই অভ্যুত্থানের রক্ত ও জীবনের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই অবস্থান। ১৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবির পক্ষে আমাদের কর্মসূচি তুলে ধরা হবে।’

পৃথক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জানিয়েছে, ‘সমমনা আট দলের যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি দল পৃথকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রোববার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সংবাদ সম্মেলন করছে। দলের আমির মাওলানা মামুনুল হক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন এবং যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা করবেন।