‘হ্যাঁ’–‘না’তেই সীমিত সদস্যদের ভূমিকা

জাতীয় সংসদ ভবন
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসছে নিয়মিত বিরতিতে। প্রয়োজনীয় আইনও পাস হচ্ছে। একসময়ের মতো ওয়াকআউট, সংসদ বর্জন নেই। কিন্তু সংসদ আসলে কতটা কার্যকর, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারছে কতটা—এই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে।

দশম জাতীয় সংসদের মতো বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদেও সরকার ও বিরোধী দল মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা হ্যাঁ-না–তেই সীমিত। সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবে তেমন কোনো সংসদীয় বিতর্ক বা আলোচনা হতে দেখা যায়নি এই সংসদে। মন্ত্রীদের জন্য সম্পূরক প্রশ্ন, জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (বিধি-৭১) আলোচনা বন্ধ আছে দীর্ঘ সময় ধরে। গত প্রায় পাঁচ বছরে কোনো মুলতবি প্রস্তাবেও আলোচনা হয়নি। অন্যদিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর বেশির ভাগই নিস্ক্রিয়।  

জাতীয় সংসদের প্রধান দুটি কাজ—আইন প্রণয়ন ও আলোচনা। সে দুটি বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে। এই সংসদে সবচেয়ে বেশি এবং ভালো ভালো আইন পাস হয়েছে। করোনার সময়ও সংসদ চলেছে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংসদ সদস্যরা বাজেট পাস করেছেন। সব মিলিয়ে এই সংসদ কার্যকর বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর–ই–আলম চৌধুরী

জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রশ্নে সংসদ

সংসদীয় ব্যবস্থায় মোটা দাগে সংসদের দুটি কাজ—আইন প্রণয়ন ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু গত প্রায় পাঁচ বছরে এ দুটি ক্ষেত্রেই একাদশ জাতীয় সংসদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আইন প্রণয়ন নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে; কিন্তু সে আলোচনা আইন তৈরিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। সরকার যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই আইন হয়েছে—বিরোধীদের আপত্তিতে বড় কোনো পরিবর্তন হতে দেখা যায়নি। কিছু বিষয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারের ‘সতর্ক সমালোচনা’ করলেও তারা ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা থেকে মুক্ত হতে পারেনি।

আরও পড়ুন

২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে একাদশ জাতীয় সংসদ। করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর এই সংসদের কার্যক্রম ছিল অনেকটাই সীমিত। সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দুটি বিশেষ অধিবেশনসহ এখন পর্যন্ত একাদশ সংসদের ২৩টি অধিবেশন বসেছে। ৩ সেপ্টেম্বর বসছে ২৪তম অধিবেশন। এরপর চলতি সংসদের আর একটি অধিবেশন বসতে পারে আগামী মাসে।

বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল। আর রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থেকে এই সংসদে ছিলেন মাত্র সাতজন (একজন সংরক্ষিত আসনে)। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। বিএনপির সদস্যরা সংসদে থাকা অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বর্তমান সংসদে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি বিল পাস হয়েছে। কিন্তু এসব বিল পাসে সংসদ সদস্যের ভূমিকা ছিল ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

জাতীয় সংসদের কার্যক্রম নিয়ে নিয়মিত গবেষণা প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে পঞ্চম—এই পাঁচটি অধিবেশন বিশ্লেষণ করে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। সেখানে তারা বলেছিল, আইন প্রণয়ন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই সংসদের প্রথম পাঁচটি অধিবেশন প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর ছিল না।

এর পরের বছরগুলোতেও সংসদের ভূমিকায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর–ই–আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় সংসদের প্রধান দুটি কাজ—আইন প্রণয়ন ও আলোচনা। সে দুটি বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে। এই সংসদে সবচেয়ে বেশি এবং ভালো ভালো আইন পাস হয়েছে। করোনার সময়ও সংসদ চলেছে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংসদ সদস্যরা বাজেট পাস করেছেন। সব মিলিয়ে এই সংসদ কার্যকর বলে দাবি করেন তিনি।

আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যরা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারেন, তা ফুটে ওঠে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের একটি বক্তব্যে। গত ১০ এপ্রিল জাতীয় সংসদের বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করতে সক্ষম নয়।

'হ্যাঁ’-‘না’তেই সীমিত

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বর্তমান সংসদে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি বিল পাস হয়েছে। কিন্তু এসব বিল পাসে সংসদ সদস্যের ভূমিকা ছিল ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আগে বিএনপির ২-৩ জনসহ ১২-১৩ জন সংসদ সদস্য বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব আনতেন। বিএনপির সদস্যরা পদত্যাগ করার পর এখন জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৮-১০ জন সংসদ সদস্য বিভিন্ন বিলের ওপর সংশোধনী এনে থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলো গ্রহণ করেন না মন্ত্রীরা। যেগুলো গ্রহণ করা হয়, সেগুলো মূলত শব্দগত বা দাঁড়ি, কমা সংশোধন। এতে বিলের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না। দু–একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মন্ত্রী ব্যতীত সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের বিলের ওপর সংশোধনী আনা বা আলোচনায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। সংসদে পাসের জন্য তোলার আগে বিল পরীক্ষা করা হয় সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে। সেখানেও বিলের বড় কোনো পরিবর্তন হয় না।

বর্তমান সংসদে যে বিলগুলোতে বেশি সংশোধনী সংসদে গ্রহণ করা হয়েছিল, তার একটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২’।  একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণফোরামের মোট ১২ জন সদস্য ৭৬টি সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২২টি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু এসব সংশোধনী গ্রহণের ফলে বিলে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

জাতীয় সংসদ ভবন
ফাইল ছবি

আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যরা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারেন, তা ফুটে ওঠে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের একটি বক্তব্যে। গত ১০ এপ্রিল জাতীয় সংসদের বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নে বৈধতা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করতে সক্ষম নয়।  

অন্যদিকে একটি নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি হয়েছে গত জুনে পাস হওয়া ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিলের ক্ষেত্রে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম এই বিলে সংশোধনী প্রস্তাব দেন যেন ব্যাংকের পরিচালক পদের মেয়াদ টানা ১২ বছর করা হয়। বিরোধী দলের আপত্তির মুখে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এটি নিয়ে সংসদের বাইরেও সমালোচনা হয়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের
ছবি: সংগৃহীত

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিতর্ক নেই

সংসদের কাজ স্থগিত রেখে সমসাময়িক কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য মুলতবি প্রস্তাব আনা যায়। কিন্তু জাতীয় সংসদে মুলতবি প্রস্তাবের আলোচনা হতে দেখা যায় না। একাদশ সংসদেও কোনো মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি। ২০২২ সালের জুনে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়ে একটি মুলতবি প্রস্তাব এনেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তবে কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, বাজেট অধিবেশনে সাধারণ আলোচনার জন্য মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করা যায় না বলে তা গৃহীত হয়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ‘হরিলুট’ ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে একদিন আলোচনার দাবিও করেছিলেন তিনি। সে বিষয়েও আলোচনা হয়নি।
এ ছাড়া কার্যপ্রণালি বিধিতে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনারও বিধান আছে। চলতি সংসদে বেশির ভাগ সময় জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের ওপর আলোচনা স্থগিত রাখা হয়। কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী, জনস্বার্থ– সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব (প্রস্তাব সাধারণ) আনা যায়। এই আলোচনাও খুব বেশি হয়নি। গত বছরের আগস্টে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জানাতে এই বিধিতে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের একটি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এটি ছিল ব্যতিক্রম। এর বাইরে সংসদে সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্ধারিত কোনো আলোচনা বা বিতর্ক হতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অনির্ধারিত (পয়েন্ট অব অর্ডার) বক্তব্য দিয়েছেন। তবে সেসব ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ সময় কোনো জবাব দিতে দেখা যায়নি।

জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিচ্ছেন রুমিন ফারহানা
ফাইল ছবি প্রথম আলো

সংসদে বিএনপির হুইপ ছিলেন বিএনপির রুমিন ফারহানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সংসদ একেবারেই অকার্যকর। একাদশ সংসদে  ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্য। সেখানে বিএনপির অল্প কয়েকজন সদস্য যখনই মন্ত্রীদের জবাবদিহি করতে চেয়েছেন, তখনই হইচই, চিৎকার, চেঁচামেচি করে পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে। কোনো প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রীরা অতীত টেনে, অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে জবাব এড়িয়ে গেছেন।

বিরোধী দলের ভূমিকা

সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হকের একটি বক্তব্যেই পরিষ্কার হয় তাদের ভূমিকা আসলে কেমন। ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে মুজিবুল হক সংসদে বলেছিলেন, ‘সরকারের কথা বলতে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে, মাননীয় স্পিকার, পাবলিক আমাদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে।’

চলতি বছর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সংসদের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। কিন্তু সংসদে তাঁকে সেভাবে জোরালো ভূমিকায় দেখা যায়নি।

তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মনে করেন একাদশ সংসদ মোটামুটি কার্যকর ছিল। কারণ, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে জনগণের কথা সংসদে বলেছে।

সংসদীয় কমিটি নিষ্ক্রিয়

একাদশ জাতীয় সংসদ যাত্রা শুরুর মাত্র ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি করা হয়েছিল। দ্রুততার সঙ্গে কমিটি গঠন করা হলেও তিন বছর ধরে বেশির ভাগ কমিটির তেমন তৎপরতা নেই। ৫০টি সংসদীয় কমিটির মধ্যে ৩৯টি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত। বাকি ১১টি কমিটি বিষয়ভিত্তিক।

সংসদীয় কমিটির কাজ হচ্ছে, প্রতিমাসে অন্তত একটি বৈঠক করে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করা। কিন্তু এই নিয়ম মানছে না বেশির ভাগ কমিটি। বর্তমান সংসদে করোনা মহামারির কারণে এক বছরের বেশি সময় কোনো কমিটির বৈঠক সেভাবে হয়নি। চলতি সংসদে গত প্রায় পাঁচ বছরে (গত আগস্ট পর্যন্ত) সবচেয়ে বেশি বৈঠক করেছে সরকারি হিসাব কমিটি (১১৯টি বৈঠক)। মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত কমিটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০টি বৈঠক করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

এ ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ৪০টি, মহিলা ও শিশু ৩৯টি, বন ও পরিবেশ ৩৮টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৩৭টি, ত্রাণ ও দুর্যোগ ৩৫টি, পররাষ্ট্র ৩৪টি, যুব ও ক্রীড়া ৩২টি, আইন ৩২টি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ৩০টি বৈঠক করেছে। আর বিষয়ভিত্তিক কমিটিগুলোর মধ্যে সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটিকে সক্রিয় দেখা গেছে। তারা ৩৪টি বৈঠক করে। এর বাইরে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অন্য কমিটিগুলো যেমন অর্থ, খাদ্য, ভূমি, বাণিজ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, শিল্প মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ছিল কার্যত নিষ্ক্রিয়। এ কমিটিগুলো গত প্রায় ৫ বছরে ৩০টি করে বৈঠকও করেনি।
মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নিয়ে কমিটিগুলো তদন্ত করেনি বললেই চলে। করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়মের বিষয় আলোচিত ছিল। কিন্তু সংসদীয় কমিটি ওই সময়টাতে বৈঠক করেনি এবং এসব দুর্নীতির বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। কিন্তু এই সংকট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কখনো আলোচনা করেনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি গত প্রায় ৫ বছরে মাত্র ১১টি বৈঠক করেছে।

সংসদীয় কমিটিগুলোতে সদস্যদের উপস্থিতিও কম। গত বছর ১০টি সংসদীয় কমিটির ১২৮টি বৈঠকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাত্র দুটি বৈঠকে কমিটির সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এই কমিটিগুলোর সদস্য ছিলেন মোট ১০৫ জন। এর মধ্যে ৩৬ জন সংসদ সদস্যের নিজ নিজ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশের কম।

আইন প্রণয়ন বা সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা—কোনো ক্ষেত্রেই বর্তমান সংসদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন সংসদ বিষয়ে গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সত্যিকারের বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এর বড় কারণ। বিরোধী দল না থাকলে কোনো সংসদ কার্যকর হতে পারে না।