তাঁরা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করছেন না: মির্জা ফখরুল

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুধবার সন্ধ্যায় গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরছবি সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এতটুকু খুশি নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তাঁরা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করছেন না।

বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। সেখানে ডোনাল্ড লুর সফরের প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পশ্চিমা বিশ্বের একটা অবস্থান ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। তারা সে অবস্থান থেকে সরে গেছে কি না।

এর জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জানি না আপনারা কী অবস্থানে তাঁদের ভেবেছিলেন। আমরা যেটা দেখেছি, সেটা হচ্ছে তাঁরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছেন। এটা তাঁরা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। তাঁদের যে হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট বেরিয়েছে, সেই রিপোর্টে তো বাংলাদেশে আপনারা যা বলেন না, তার অনেক বেশি তাঁরা বলেছেন। এটাতে প্রমাণিত হয় যে তাঁরা এতটুকু খুশি নন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, যেকোনো দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হয় সবাইকে। সে জন্য তাঁরা সেটাকে অব্যাহত রাখেন। এমনকি সামরিক শাসকদের সঙ্গেও তাঁদের সম্পর্ক রাখতে হয়। আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থাটা, সে অবস্থার প্রেক্ষাপটে তাঁরা তাঁদের দেশের প্রয়োজনে যেটা উপকারী মনে করছেন, সেটা করছেন। তাঁরা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করছেন না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির গুজব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্বীকার করা–সম্পর্কিত আরেক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী মিথ্যার ওপর টিকে আছে। তারা জনগণকে সারাক্ষণ প্রতারণা করছে, মিথ্যা কথা বলছে, মিথ্যা ডেটা দিচ্ছে, মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। যারা তথ্য আনতে যায়, সেই সাংবাদিকদের যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সবখানে একই অবস্থা। এরা মিথ্যার ওপর টিকে আছে, মিথ্যার ওপরই তারা টিকে থাকতে চায়।’

ব্রিফিংয়ের আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাকে নিয়ে গণফোরাম ও পিপলস পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক; বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাবুল সরদার চাখারিসহ দুই দলের নেতারা অংশ নেন।

বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব রকম অপকৌশল করছে। তারা নিজেদের ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে। গোটা রাষ্ট্রকে তারা একটা একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থায় নিয়ে যেতে চাইছে এবং তারা এটা করছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে।

বিএনপির মহাসচিবসহ গণফোরাম ও পিপলস পার্টির নেতারা একমত হয়েছেন, বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তাঁরা যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এরপর গুলশানের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।