আওয়ামী লীগকে পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান বিএনপির

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আহ্বান জানান। ক্ষমতাসীনদের পাল্টা কর্মসূচিকে সংঘাতের উসকানি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,‘ দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচিতেও তারা পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে করে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র, সেটা উন্মোচিত হচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগ) ইউনিয়নে আমাদের কর্মসূচিকেও নস্যাৎ করার জন্য এ ধরনের পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে, একেবারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়। একটা কথা খুব জোর দিয়ে বলতে চাই যে আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই চেষ্টা করছে উসকানি দিয়ে, হুমকি দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কমসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য।’

এর জন্য ক্ষমতাসীনদের দোষারোপ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা কিন্তু গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টা করছে একটি অনিশ্চয়তার দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

ইউ আর ‘অ্যাক্টিং’, দে আর ‘রিঅ্যাক্টিং’

বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিকে ‘ইন্টারেস্টিং’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এবার প্রথম আমরা আওয়ামী লীগকে রিঅ্যাক্ট করতে বাধ্য করছি। বিষয়টা কিন্তু ইন্টারেস্টিং। ইউ আর অ্যাক্টিং, দে আর রিঅ্যাক্টিং। এটা নতুন একটা ফেনোমেনা। অর্থাৎ তারা কিন্তু সন্ত্রস্ত্র। তারা এখন নিজেদের রক্ষা করার জন্য অপকৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ কাজটি করছে।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাম্প্রতিক সময়ে বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে পুলিশের গুলি, হামলা, নেতা-কর্মীদের প্রাণহানির ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘শত উসকানি, পুলিশের গুলি অত্যাচার–নির্যাতনের মুখেও আমরা কিন্তু এতটুকুও প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। আপনারা দেখেছেন, গত ৭ ডিসেম্বর কীভাবে পুলিশ আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে, একজন মারা গেছেন, ৪৩৬ জনকে দলীয় কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাকে ও মির্জা আব্বাসকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরেও কিন্তু আমরা সেই উসকানিতে পা দিইনি।’

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি দাবি আদায় করতে পারবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সম্ভব। অতীতে এ রকম হয়েছে। তবে আন্দোলনের যাত্রাই বলে দেবে তা কোন পথে যাবে, কীভাবে যাবে। আমরা সম্পূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি এবং করব। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা তাদের পরাজিত করব।’

ঢাকায় আবার পদযাত্রা

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আগামী ৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায় নতুন করে দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি হলো ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাব মাঠ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা। এর আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। ১২ ফেব্রুয়ারি শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে রিংরোড, শিয়া মসজিদ, তাজমহল রোড, নুরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে বছিলা পর্যন্ত পদযাত্রা। এই কর্মসূচি করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

ঢাকায় একবার পদযাত্রার পর নতুন করে এই কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি কী অর্জন করতে চায়—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে গেছি। ইউনিয়ন পর্যায়ের যে কারণে গেছি, এর মূল কারণটা হলো দেশের পুরো জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই আন্দোলনটাকে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদের আল্টিমেট টার্গেট হচ্ছে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা।’

গতকাল মঙ্গলবার দলের স্থায়ী কমিটির সভা হয়েছে। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আজ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, ৪ ফেব্রুয়ারি ১০টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, গ্রেপ্তার, বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচের বিবৃতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, খসড়া তথ্য সংরক্ষণ আইন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গীতে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সদস্যসচিব আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ, নাজিমউদ্দিন আলম উপস্থিত ছিলেন।