রাজপথে সাংগঠনিক শক্তি দেখাল আওয়ামী লীগ

সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে গতকাল দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথ দখলে আছে—এ বার্তা দিতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল রাজধানীর রমনা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বিরোধী দল বিএনপি বড় জমায়েতের মাধ্যমে মাঠে শক্তি দেখাতে শুরু করেছে। এর পাল্টা হিসেবে সরকারি দল আওয়ামী লীগও গতকাল বুধবার ঢাকাসহ সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করেছে। উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছে ১৮ বছর আগে ১৭ আগস্ট সারা দেশে জঙ্গিদের সিরিজ বোমা হামলার বর্ষপূর্তিকে।

জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ১১ আগস্ট পল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। এতে দীর্ঘদিন পর বিপুল জমায়েত করে দলটি। ওই সমাবেশ থেকে রাজপথ দখলের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করার হুমকি দেন দলটির নেতারা।

এত বছর ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার বর্ষপূর্তিতে আওয়ামী লীগ বড় কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। এবার একযোগে সারা দেশে এত বড় কর্মসূচি পালনের কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, পল্টনে বিএনপির জমায়েত ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। রাজপথের কর্তৃত্বও বিরোধীদের হাতে ছেড়ে দেবে না—এই বার্তা দিতেই আওয়ামী লীগ পাল্টা জমায়েতের সিদ্ধান্ত নেয়। শোকের মাস শেষে আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

আগস্ট মাসে শোকের কর্মসূচির বাইরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বড় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ না করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিএনপি বড় সমাবেশ করার কারণে প্রথা ভেঙে আওয়ামী লীগও সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিনের বাইরে ঢাকায় বড় জমায়েত না করার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে আওয়ামী লীগের। সাম্প্রতিক কালে একান্তই প্রয়োজন না হলে কর্মদিবসে ঢাকায় সমাবেশ করা হয়নি। বেশির ভাগ কর্মসূচি শনিবার পালন করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার গতকালের সমাবেশে বেশি মানুষের জমায়েত নিশ্চিত করতে মহানগর এবং এর আশপাশের এলাকার আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন এবং দফায় দফায় প্রস্তুতি বৈঠক হয়।

সমাবেশে যোগ দিতে গতকাল দুপুর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক-বাসে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে জমায়েত হন। একপর্যায়ে মৎস্য ভবন, রমনা পার্ক, শাহবাগ মোড়ের আশপাশে জমায়েত ছড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেকোনো সময় সভা-সমাবেশ করতেই পারে। বিএনপি নেতারা সমাবেশ করে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আমরা তো কাউকে রাজপথ ইজারা দিয়ে দিইনি।’ তিনি বলেন, শোকের মাস শেষে আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ সারা দেশেই সভা-সমাবেশ এবং দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এত দিন বিরোধী দল মাঠে কর্মসূচি নিয়ে আসেনি। এখন বিরোধীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিংসহ অর্থনীতি চাপে পড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। এ সুযোগে বিরোধী দল মানুষকে উসকে দিয়ে মাঠে নামাতে চাইতে পারে। আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলে বিরোধীরা সফল হবে না। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলকে আরও সক্রিয় করার অংশ হিসেবে প্রথমে বিভাগীয় পর্যায়ে, পরে জেলা পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করা হবে। ডিসেম্বরের আগে আগে দলীয় সভাপতি মাঠপর্যায়ের নেতাদের ঢাকায় ডেকে মতবিনিময় করবেন।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতারা পল্টনের সমাবেশ থেকে যেভাবে বক্তৃতা করেছেন, যেন রাজপথ তাঁদের দখলে চলে গেছে। রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছে—বিএনপি এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলে তো আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে না।

গতকাল ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের দেওয়া বক্তব্যেও এর আঁচ পাওয়া যায়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তৃতায় বিএনপিকে রুখতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এদের রুখতে হবে। মোকাবিলা করতে হবে এবং আগামী নির্বাচনে প্রমাণ করে দিতে হবে, এই দেশ বঙ্গবন্ধুর দেশ।’ আন্দোলনে, রাজপথে, নির্বাচনে ‘খেলা হবে’ বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

বর্তমান সরকারের অধীন বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে যেভাবে লেজ গুটিয়ে খালেদা জিয়া বাড়ি ফিরে গিয়েছিল, আজকের সমাবেশ প্রমাণ করে, আরেকবার বিএনপিকে আমরা ঘরে তুলে দেব।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান হয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এর ফলে রাজধানীতে যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।