জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী সমঝোতা
জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতায় কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এলডিপি) যুক্ত হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন জাতীয় জীবনের এক কঠিন বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে, সে সময় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, দুর্নীতিমুক্ত ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এত দিন আট দল কাজ করে আসছে। তার সঙ্গে আরও দুটি দল সম্পৃক্ত হয়েছে। কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি ও এনসিপি। আট দল একসঙ্গে ছিল। আর দুটি দল তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
এনসিপির সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে বৈঠক শেষ হয়েছে জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, তাঁরা (এনসিপি নেতারা) এই সংবাদ সম্মেলনে আসার সময় ও সুযোগ পাননি। এ ছাড়া দলীয় পরিসরে সভা করবেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরাসরি আট দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্ত দলগুলোকে জানিয়েছেন। আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
১০ দল মজবুত নির্বাচনী সমঝোতায় এক হয়েছে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সারা দেশের ৩০০ আসন (প্রার্থী) নির্ধারণ করেছে। দুটি দল একেবারে শেষ পর্যায়ে এসেছে। আরও অনেক দল আসন সমঝোতায় আগ্রহী ছিল। তবে এ মুহূর্তে এই প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ত করা দুরূহ হয়ে গেছে। অনেকের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তাদের সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। এ জন্য তিনি দলগুলোর নেতাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন।
আসন সমঝোতার বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমাদের আসন সমঝোতা অলমোস্ট কমপ্লিট (প্রায় শেষ)। সামান্য একটু বিষয় যেগুলো রয়েছে, আমরা আশা করছি নমিনেশন ফাইল করার পরপরই আমরা সেটাও ইনশাআল্লাহ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সুন্দরভাবেই সমাধান করতে পারব, আপনারা দোয়া করবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। এ ব্যাপারে আমরা খুবই আস্থাশীল।’
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেড় মাসেরও কম সময় হাতে আছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে দলগুলো অঙ্গীকারবদ্ধ। দলগুলো চায়, কোনো হেরফের না হয়ে যে তারিখ নির্ধারণ হয়েছে, সেই তারিখেই নির্বাচন হোক।
নির্বাচন আয়োজনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, এখনো তাদের অনেক বাকি রয়ে গেছে। এখনো সব দলের জন্য সমতল মাঠ তৈরি হয়নি। এটি তৈরির দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। তারা যেন যেকোনো ধরনের লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি এবং কারও প্রতি কোনো ধরনের আনুকুল্যের ঊর্ধ্বে উঠে তাদের দায়িত্ব পালন করে। জাতি তাদের কাছে সেই প্রত্যাশাই করে। এর ব্যতিক্রম জাতি মানবে না। গত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচনে কেউ ভোটের অধিকার হরণ করতে চাইলে সেটি বরদাশত করা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান, সমঝোতায় আসন বিন্যাস কীভাবে হলো? জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘জানবেন। ডিটেইলসটা জানবেন। আমি বলছি, অল্প একটু আমাদের বাকি আছে। আমরা অতিসত্বর আপনাদের তা স্পষ্ট করে দেব, ইনশা আল্লাহ।’
নতুন দল আসায় এই জোট নির্বাচনী জোট হলো কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘এটা দেশ গঠনের জোট। এটা নির্বাচনের জোট, এটা রাজনৈতিক জোট। এটা সকল ধরনের... মানে, ওই জোট বলেন আর সমঝোতা বলেন, যা-ই বলেন, এটা সবগুলো পারপাস কাভার করার জন্য।’
ভবিষ্যতে আন্দোলনেও এসব দল একসঙ্গে থাকবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা আশা করছি, একসাথেই আমরা করব ইনশা আল্লাহ। দলীয় কর্মসূচি যার যার অনেকগুলো থাকবে। তারপরে ন্যাশনাল ইস্যুতে যেখানেই প্রয়োজন, আমরা একসাথে করব ইনশা আল্লাহ।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, এখানে কোনো একক দল আসন বণ্টন করবে না। ন্যায্যতার ভিত্তিতে সবার হাতে আসন তুলে দেওয়া হবে। সবাই সবাইকে তুলে দেবে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো দল কাউকে তুলে দিচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমিরের বাঁ পাশে বসেছিলেন এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। এ সময় তিনি বলেন, এখন আর আট দল নেই। নতুন দুই দল যুক্ত হওয়ায় এটি ১০ দলের নির্বাচনী সমঝোতা হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সমমনা দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটিতে জামায়াতের প্রতিনিধি ও দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ প্রমুখ।