শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা

‘প্রেরণাদায়িনী মা’ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ছিলেন না, ছিলেন সহযোদ্ধা, নীরব রাজনৈতিক সহকর্মী। তাঁকে আঁকা মানে পুরো বাংলাদেশকে আঁকা, জাতির পিতাকে আঁকা, তাঁর প্রেরণাকে আঁকা, তাঁর শক্তি ও দর্শনকে আঁকা।

সোমবার (৮ আগস্ট) শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শনিবার সকালে জাতীয় জাদুঘরে তাঁর স্মরণে শুরু হয়েছে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘প্রেরণাদায়িনী মা’। প্রদর্শনীতে বঙ্গমাতাকে স্মরণ করে এসব কথা বলেন শিল্পী ও রাজনীতিকেরা।

জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে প্রদর্শনীর আয়োজন করে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটি। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ছিলেন না, ছিলেন সহযোদ্ধা, নীরব রাজনৈতিক সহকর্মী। আমরা নিয়মিত তাঁদের বাড়িতে যেতাম। তাঁর হাতের রান্না খাওয়ার সুযোগও হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালে যখন দেশে বন্যা হচ্ছে, সে রকম একদিনে ওই বাড়িতে গেলে তিনি বলেছিলেন, “এখানে কী? মানুষ কষ্ট করছে, মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াও।” এই আদর্শ নারীর জীবন থেকে এখনকার মেয়েদের অনেক কিছু শেখার আছে।’

বিএনপির সঙ্গে কীভাবে রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখবেন—সেই প্রশ্ন তুলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে তাদের সঙ্গে রাজনীতি করব। কর্মসম্পর্কের দেয়াল তো তারাই তুলেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তরে প্রথম রাজনৈতিক দেয়াল তৈরি হয়। এ দেয়াল আরও উঁচু করেছে জেলহত্যা। এ দেয়াল আরও উঁচু হয়েছে একুশে আগস্ট।

তারপরও বঙ্গবন্ধুর কন্যা বেগম জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর ছুটে গিয়েছিলেন সন্তানহারা মাকে শোক জানাতে। তাঁর মুখের ওপর ঘরের দরজা বন্ধ, বাড়ির মেইন গেট বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক কীভাবে রাখব?’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতায় এলে তাঁদের স্ত্রীরা হন ফার্স্ট লেডি। কিন্তু এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের জন্য ফার্স্ট লেডির চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর “কারাগারের রোজনামচা” থেকে আমরা সেটা জানতে পারি। কী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, কী মানসিক ও অর্থনৈতিক যাতনার মধ্য দিয়ে এই মহীয়সী নারী তাঁদের শুধু লালন–পালনই করেননি, বাংলাদেশের একেকজনকে সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

বিশ্বের খুব কম রাষ্ট্রপ্রধানের পরিবারে এ রকম মানুষ দেখা যায়।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতাকে আঁকা মানে পুরো বাংলাদেশকে আঁকা, জাতির পিতাকে আঁকা, তাঁর প্রেরণাকে আঁকা, তাঁর শক্তি ও দর্শনকে আঁকা। এমন একজন মহিলা কত হাজার বছরে আসবে, জানি না।’

অনুষ্ঠানের অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ–উপাচার্য নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ছিল প্রখর। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে তাঁদের পাশের বাড়িতে থাকার সুবাদে ওই বাড়িতে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ৩০ তারিখ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে চলে যান। পরদিন আমি ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি পূর্ব দিকের জানালায় তিনি বিষণ্নমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে আঙুল দিয়ে দেখালেন নিচে কর্তব্যরত একজন সিপাহিকে। বললেন, “আজ ওর বন্দুক মাটির দিকে তাক করা, কাল হয়তো এই বাড়ির দিকে তাক করবে।”’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান আবদুল খালেক বলেন, ‘আমরা বলি, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। পাশাপাশি এটিও বলা দরকার, ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্ম না হলে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হতেন না। তিনি যখন জেলখানায় ছিলেন, বেগম মুজিব তাঁকে কাগজ–কলম দিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, “লেখেন। আপনি পারবেন।

আপনার অনেক কিছু লেখার আছে।” বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ যেমন বিশ্বের সেরা ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি তাঁর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” একদিন সেরা আত্মজীবনী হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।’

শিল্পীরা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে। সেভাবেই যেন তুলে ধরেছেন ক্যানভাসে। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ৬৬ জন শিল্পীর মধ্যে আছেন রফিকুন নবী, হামিদুজ্জামান খান, আবদুল মান্নান, বীরেন সোম, সৈয়দ আবুল বারক আলভী, ফরিদা জামান, তরুণ ঘোষ, মোহাম্মদ ইউনুস, জামাল উদ্দিন আহমেদ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, রোকেয়া সুলতানা, শেখ আফজাল হোসেন, নিসার হোসেন প্রমুখ।

বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা এসব ছবিতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে কখনো দেখা গেছে একা, কখনো শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ রাসেলের সঙ্গে। সাত দিনের এই প্রদর্শনী চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত।