অসংখ্য আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১ জুনছবি: দীপু মালাকার

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ কীভাবে দেশের বাইরে চলে গেলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন, এক বেনজীর, এক আজিজ (সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ) নয়। অসংখ্য আজিজ-বেনজীর তারা (সরকার) তৈরি করেছে। তারা দেশটাকে লুটের সাম্রাজ্যে পরিণত করেছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৪ মে কীভাবে দেশের বাইরে চলে গেলেন? গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘যাওয়ার আগে তাঁর (বেনজীর) ব্যাংক হিসাব খালি করে গেছেন। ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ছিল। বেশি-কম হতে পারে। আমার প্রশ্ন তিনি কীভাবে গেলেন।’

কেউ ছাড় পাবে না, আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষকে আহাম্মক মনে করেছেন, সবাই বোঝে, এসব আপনাদের লোক দেখানো প্রতারণা। যেভাবে এখন পর্যন্ত প্রতারণা করে দেশ শাসন করছেন।’

বিএনপি হেরে গেছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা লড়ছি, মরছি, আত্মত্যাগ করছি। কেউ পিছপা হইনি। বিএনপি নতুন করে আবার কাজ শুরু করেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও লড়াই করছে। বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত এক দিনে স্বাধীন হয়নি। পাকিস্তান এক দিনে হয়নি। বাংলাদেশও এক দিনে হয়নি। ২৫ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমরা তো মাত্র কয়েক বছর লড়াই করলাম, মাত্র ১৫ বছর। আমরা হেরে গেছি, এটা মনে করার কোনো কারণ নাই।’

বিএনপি যে লড়াই করছে এটা সাধারণ কোনো লড়াই নয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এটা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই। এই গণতান্ত্রিক লড়াই করতে গিয়ে গত কয়েক বছর দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। বলতে পারেন সাফল্য তো আসছে না। সাফল্য এক দিনে আসে না। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও লড়াই চলছে।’

বিএনপি তার অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে সরবে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক সময় কৌশল পরিবর্তন হতে পারে। আমরা নতুন করে আবার কাজ শুরু করেছি। জয় আমাদের হবেই। আমরা সত্যের পথে ন্যায়ের পথে লড়াই করছি। এই লড়াইকে বিজয় আসবেই।’

জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালে দুঃশাসনের কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরে জিয়াউর রহমান সম্ভাবনাময় জাতি হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। কৃষিতে বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। পোশাক খাতকে একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। শিক্ষা খাতের উন্নয়ন করেছে শিশু একাডেমি তৈরি করেছেন। পররাষ্ট্রনীতিতে জিয়া অসামান্য অবদান রেখেছেন।

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং আয়োজক সংগঠনের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ–উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লুৎফর রহমান, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক তাজমেরি এস এ ইসলাম প্রমুখ।