সংসদে ১৫১ জন নারী প্রতিনিধি কেন থাকবে না, প্রশ্ন মঈন খানের
বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী এবং সেখানে সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫১ জন কেন নারী প্রতিনিধি থাকবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, এটা অনেকে হয়তো বলবেন অবান্তর, অবাস্তব। অনেক প্রশ্নই আসবে, কিন্তু অবান্তর-অবাস্তব নয়। এখানে মূল জিনিসটা হচ্ছে সমাজব্যবস্থা।
বিএনপির এই নেতা বলেছেন, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজব্যবস্থায় গায়ের জোরে নারীদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। কোনো নারীর রাজনীতিক হতে হলে পিএইচডি ডিগ্রিধারী হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তিনি আসন্ন নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলকে নারী প্রার্থী দিতে আহ্বান জানান।
আজ রোববার বিকেলে ‘জুলাই আপরাইজিং অ্যান্ড দ্য ইন্টারপ্লে বিটুইন পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন আবদুল মঈন খান। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেমিনারটির আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা খান ফাউন্ডেশন।
আবদুল মঈন খান বলেন, একটা যুক্তি দেওয়া হয়, যোগ্য মেয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা নারী। সেখানে যোগ্য মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না—এটা হতে পারে না। হতে পারে লেখাপড়ার দিক থেকে মেয়েরা অনেকটা পিছিয়ে আছে, রাজনীতিক হওয়ার জন্য তো পিএইচডি ডিগ্রিধারী হওয়ার দরকার নেই। গ্রামে অনেক শক্তিশালী নারী রয়েছেন, যাঁরা নিজের অধিকারের কথা বলে থাকেন।
‘মেয়েদের নমিনেশন দিলে তো তারা পাস করে না’—এমন প্রচলিত ধারণার প্রসঙ্গ টেনে মঈন খান বলেন, ‘সেই ৩০ বছর আগের কথাটি আজকে আমি পুনরাবৃত্তি করতে বাধ্য হচ্ছি। যত ছেলেকে নমিনেশন দেওয়া হয়, সবাই পাস করে তো? কাজেই নমিনেশন দেওয়ার পরে কেউ পাস করবে, কেউ ফেল করবে, সেটা যার যার এলাকা, যোগ্যতা, পপুলারিটি অনেক কিছুর ওপরে নির্ভর করে।’
নারীর ক্ষমতায়নে মানসিকতার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আজকের সমাজব্যবস্থাকে যদি আমরা পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে কিন্তু এই নারী মুক্তি, নারী আন্দোলন, নারী শক্তি, নারীর সমতা—এসব সেমিনার বক্তৃতা করে কোনো লাভ হবে না। আমাদের অন্তর থেকে সে পরিবর্তনটি আনতে হবে।’
সেমিনারের শুরুতে খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোখসানা খন্দকার সংস্থাটির নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় নারীকে আরও বেশি যুক্ত করার আহ্বান জানান।
সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নারী সংস্কার কমিশনের (নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন) করা সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি না দেওয়ায় তিনি কিছুটা দুঃখিত এবং অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, শত শত প্রস্তাব ছিল। যার মধ্যে কিছু বাস্তবসম্মত ছিল। কিছু সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। এটি (প্রস্তাবগুলো সম্মতি না দেওয়া) সত্যি সত্যি দুঃখজনক।
আজকের সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক তানিয়া রব প্রমুখ।