সহিষ্ণু পরিবেশের জন্য সময় লাগবে

হারুন-অর-রশিদ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতো হবে বলে মনে হয় না। আগামী নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হবে—এটা কাম্য এবং প্রয়োজনীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, বিরোধী দলগুলো বিনা বাধায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারবে। এটা প্রধানমন্ত্রী মন থেকেই বলেছেন বলে মনে হয়।

এই সুযোগে বিএনপিকে নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করতে হবে। নির্বাচন বর্জন, সন্ত্রাস ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সখ্য পরিত্যাগ করবে বলে প্রত্যাশা করি। আগামী দিনগুলোতে তারা কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করবে বলে আশা করছি। এটা সম্ভব গঠনমূলক রাজনীতির মাধ্যমে।

এর মধ্যে বিএনপি ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। সরকার কোনো বাধা দেয়নি। কিন্তু মফস্‌সলে কিছু সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আমার মনে হয়, মফস্‌সলের রাজনীতিতে নানা ডায়নামিকস (বিবেচনা) কাজ করে। কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে পুরোপুরি মানা হয় না।

পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দেখা গেছে, দল একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে, অন্যরা বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু করা যাচ্ছে না। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি সহাবস্থানের, সহিষ্ণুতার পরিবেশ দরকার আছে। এর জন্য হয়তো সময় লাগবে।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, গণতন্ত্র টেকসই করতে হলে একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার। এই বোধটা বিরোধী দলের মধ্যেও থাকতে হবে। এর জন্য বিএনপির রাজনীতিতেও নীতিগত ও আদর্শিক জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের ডাকে বিএনপি সাড়া দেয়নি, আলোচনায় অংশ নেয়নি। এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের বক্তব্য তুলে ধরা দরকার ছিল। রাজনীতির মাঠে ভারসাম্য না থাকলে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

বিএনপি অতীতে অনেক ভুল করেছে। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার থাকার কথা নয়। বিএনপি তাদের আশ্রয় দিয়েছে। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা, ২০১৫ সালের আগে-পরে জ্বালাও-পোড়াওয়ের দায় বিএনপি এড়াতে পারে না। জনগণের স্মৃতি থেকে নিশ্চয় বিষয়গুলো হারিয়ে যায়নি।

তাই বিএনপিকে জনগণের সামনে পরীক্ষা দিতে হবে। তারা যে সব সময় বিরোধী দলে থাকবে—এমনটা নয়। জনগণ যখন বুঝতে পারবে, তারা নিজেদের শোধরাতে পেরেছে, তখন আবার হয়তো ক্ষমতায় বসাবে। তাদের শোধরানোর এবং জনগণের কাছে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া উচিত নয়।

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী