ছাত্রলীগের চিকিৎসা প্রয়োজন: ছাত্র অধিকার পরিষদ

শিক্ষাঙ্গনে হামলা-নির্যাতন, সন্ত্রাস, সহিংসতায় জড়িতদের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি, রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সাজিদ হোসেন

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মানসিক বিকৃতি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ‘সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট’ দরকার।

আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে বিন ইয়ামিন মোল্লা এ কথা বলেন।

নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্রলীগের চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। তাঁদের মধ্যে মানসিক বিকৃতি ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গেস্ট রুম সংস্কৃতিকে’ এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘(ছাত্রলীগে) কে কত বেশি নির্যাতন করতে পারে, চাঁদাবাজি করতে পারে, পাশবিক হতে পারে—এসবের উৎসাহ দেওয়া হয়।’  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় তিনিসহ সংগঠনটির অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন। সেদিন ছাত্রলীগ উল্লাসে মেতে উঠেছিল উল্লেখ করে ওই ঘটনাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার জড়িতদের বিচার দাবি করেন তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি না করার শপথ নিয়েছেন উল্লেখ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, নবীন শিক্ষার্থীরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর দায় ছাত্রলীগের। তবে নবীন শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভিন্নমত প্রকাশ করলে যারা মাথায় বাড়ি দেওয়া শেখায়, নারী নির্যাতনে উৎসাহ দেয়, গেস্টরুমের নামে নির্যাতনের পক্ষে কথা বলে, তাদের রাজনীতি করবেন না। যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, তাঁদের রাজনীতি করুন।’

১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর দুই দফা হামলা হয়। হামলায় আহত নেতা–কর্মীদের মধ্যে চারজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, তিনজনকে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল ও ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন একজন।

এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি আহত অবস্থায় হুইলচেয়ারে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন। তিনি হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। একই সঙ্গে হামলাকারীদের শাস্তি না দিলে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন।

এর মধ্যেই আজ বিকেলে ‘সারা দেশে শিক্ষাঙ্গনে হামলা, নির্যাতন, সন্ত্রাস, সহিংসতায় জড়িতদের বিচার করো, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করো’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেয় ছাত্র অধিকার পরিষদ। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিটি পালিত হয়। এতে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন, নাহিদ উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আসাদ বিন রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিকেল চারটার দিকে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন। ছাত্রলীগের র‌্যাগিংবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং, হয়রানি, নির্যাতন ও হামলায় ছাত্রলীগের যাঁরা জড়িত, তাঁরা চিহ্নিত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাস বানাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার সময় এসেছে।’