১৪ দলের শরিকেরাও স্বতন্ত্রের অস্বস্তিতে

১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা ভাগাভাগিতে আসন পেয়েছে ছয়টি। তাদের চাওয়া ছিল আরও আসন বাড়ানো এবং ভাগে পাওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ শরিকদের সেই দাবি আমলে নেয়নি। ফলে ভাগে পাওয়া ছয়টি আসনে জেতার বিষয়ে অনেকটাই অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শরিক দলের প্রার্থীরা।

এবার আসন সমঝোতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) তিনটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পেয়েছে। দুই সংসদ সদস্য জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ও ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মুস্তফা লুৎফুল্লাহ আসন সমঝোতায় বাদ পড়েন। ২০১৮ সালে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনে এই তিন শরিক মিলে আসন পেয়েছিল ১০টি। তারা জয়ী হয়েছিল ছয়টি আসনে। শীর্ষ নেতা কেউ হারেননি।

এবারও পিরোজপুর-২ আসন ভাগে পেয়েছেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এই আসন থেকে তিনি ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। সর্বশেষ তিন নির্বাচনে তিনি নিজ দলীয় প্রতীক সাইকেল নিয়ে জয়ী হন। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়েও বেকায়দায় পড়েছেন। তাঁরই একসময়ের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মহিউদ্দীন মহারাজ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। যিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বরিশাল থেকে আর ভোট করেননি। সেবার তিনি বরিশাল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি মার্কায় ভোট করে পরাজিত হয়েছিলেন। ১৪-দলীয় জোট হওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। এবার আওয়ামী লীগ তাঁকে ঢাকা-৮ আসন দেয়নি। তিনি পেয়েছেন উজিরপুর-বানারীপাড়া নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ আসনটি এবং নৌকায় ভোট করছেন।

জোটের কারণে বরিশাল-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনূস মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নাখোশ। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। তাঁরা হলেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আলোচনা আছে, নৌকা ও স্বতন্ত্রের ভাগাভাগিতে মেননকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

রাজশাহী-২ আসনে চতুর্থবারের মতো জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এতে ক্ষোভ আছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সর্বশেষ তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন। এবারও তিনি একই আসনে নৌকা নিয়ে ভোট করছেন। কিন্তু এবার তাঁকে চ্যালেঞ্জে জানাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। তিনি মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে প্রার্থী হয়েছেন।

তাঁর পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যেই আছেন। তাঁরা এ–ও বলছেন যে এবার আর ‘ভাড়া খাটবেন’ না। কুষ্টিয়ার মিরপুরে ইনুর একটা ভোটব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই আছে। তবে তা আওয়ামী লীগের ভোটের চেয়ে বেশি নয়। এবার প্রথমবার আসন ভাগাভাগিতে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোশারফ হোসেন নৌকায় ভোট করছেন। সেখানে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর।

সমঝোতায় পাওয়া জাসদের আরেক আসন বগুড়া-৪। গত বছর উপনির্বাচনে জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন জোটের প্রার্থী হয়ে আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলমের কাছে অল্প ভোটে জয়ী হন। জাসদকে ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। এই আসনে স্বতন্ত্র ভোট করছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা। বিএনপি–অধ্যুষিত বগুড়ায় তিনি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ক্ষুব্ধ ভোট টানতে পারলে জাসদের প্রার্থীকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।