বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদল দেওয়ার প্রস্তাবটা আসলে খারাপ নয়। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে এ সরকারের কোনো পরিষ্কার ম্যান্ডেট নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের আসলে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে, নির্বাচনটাকে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কোনো ক্লিয়ার ম্যান্ডেট নেই। সে হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদল দেওয়ার প্রস্তাবটা খারাপ নয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপ নেয়, তাহলে তখন তার সঙ্গে সেই ম্যান্ডেটটা আসে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা যদি না থেকে থাকে, তাহলে আমি মনে করি, প্রস্তাবটা ভালোই।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সপ্তাহে তিনটি রাজনৈতিক দল দেখা করেছে এবং সাক্ষাতে তারা পৃথকভাবে প্রতিটি দল থেকেই কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। আমি শুনেছি যে সাক্ষাতে রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ করেছে গুটিকয় উপদেষ্টার ব্যাপারে। কিন্তু কেউ কারও নাম বলেনি। এটা কিন্তু একদিকে বিব্রতকর, একটু লজ্জাকর একটা ব্যাপার। কিন্তু অপর দিকে কারও নাম বলছে না, সেটা আবার আরেক ধরনের।
আমি যেমন কখনো উড়োচিঠি যে রকম গণনায় নিই না, তেমনি এ রকম উড়ো অভিযোগ কতটা গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত? আমি মনে করি, এ রকম উড়ো অভিযোগ না করে স্পষ্ট করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করতে হবে এবং সেই অভিযোগ প্রমাণসহ সবার সামনে প্রকাশ করতে হবে। যদি সরকারের মধ্যেই একটি দলের প্রতিনিধি থাকে এবং সেই দলও নির্বাচনে যাচ্ছে, তাহলে তো সরকারের নিরপেক্ষতায় কিছুটা আপস হয়ে যায়। সেদিক থেকে আমি মনে করি, আপত্তির একটা ভিত্তি আছে।
সরকার এবং প্রশাসনে ভাগ-বাঁটোয়ারা হচ্ছে টেবিলে—এ রকম একটি কথা একটি দল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে এবং সেটাও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই। এতগুলো তাজা প্রাণ গেল একটা ভালো বাংলাদেশ দেখার জন্য; একটা ভালো বাংলাদেশের জন্য। তারা লড়াই করল। যদি এই জিনিসই হয়ে থাকে, তাহলে এটা মর্মান্তিক।
শিরীন পারভীন হক, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান