সামর্থ্য নেই, এমন কোনো মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হবে না: জামায়াত আমির

জামায়াতের আয়োজনে ‘হ্যালো আওয়ার লিডার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দলটির আমির শফিকুর রহমান। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রেছবি: জামায়াতে ইসলামী ফেসবুক পেজ থেকে

সামর্থ্য নেই, এমন কোনো মিথ্যা আশ্বাস জামায়াতে ইসলামী দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, সামর্থ্য বিবেচনায় যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেই পরিকল্পনাই জাতির কাছে তুলে ধরা হবে।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান এ মন্তব্য করেন।

জামায়াতের আয়োজনে ‘হ্যালো আওয়ার লিডার’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে দলটির আমির ছাত্র ও যুবকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির বলেন, নাগরিকদের চিন্তাভাবনা জানার জন্য এরই মধ্যে জামায়াত ‘জনতার ইশতেহার’ নিয়ে এসেছে। সেখান থেকে আসা প্রস্তাবনা ও স্বপ্নগুলো জামায়াত তাদের ইশতেহারে তুলে ধরতে চায়।

তরুণদের ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে জামায়াত পরিকল্পনা সাজাবে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান বলেন, ধাপে ধাপে সেই পরিকল্পনার দিকেই এগোচ্ছে দলটি। আজকের পরিকল্পনা আগামীকালের বাস্তব কর্মসূচি হবে। তবে এমন কোনো মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হবে না, যেটা করার সামর্থ্য জামায়াতের নেই। এটি শুধু আশ্বাস আর পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, জাতির সহযোগিতা পেলে বাস্তবায়নও করা হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর জীবনে মানুষের অধিকার এবং গণতন্ত্রের জন্য অনেক লড়াই করেছেন। আজ তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন, তাঁকে ক্ষমা করে জান্নাতের অতিথি হিসেবে কবুল করুন। তাঁর প্রিয়জনদের ধৈর্যধারণ করার তৌফিক দিন।

শফিকুর রহমান বলেন, ’৪৭ সালে লড়াই করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জন্ম। এরপর টানা ২৩ বছর এটি পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এ দেশের ওপর ইনসাফ করেনি, জুলুম করেছিল। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে দ্রোহ ছিল ’৭০ সালে। ওই বছর সাধারণ নির্বাচনের ফল পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নেয়নি। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও একটি বৈষম্যহীন ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে জামায়াতের আমির মন্তব্য করেছেন।

জামায়াতের আমির বলেন, বাংলাদেশ বারবার পথ হারিয়েছে। পথহারা বাংলাদেশকে মূলধারায় ফেরত আনার জন্য দেশের গর্বিত সন্তানেরা দফায় দফায় লড়াই করেছে। এসব লড়াই ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে যুবসমাজ। বিশেষ করে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে একটি ফ্যাসিবাদী জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন।

জামায়াতের আমির বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই ছিল সেই শাসনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু কেউই সেখান থেকে রেহাই পায়নি। দফায় দফায় আন্দোলন করলেও রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে পারেনি। গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবিকে গায়ের জোরে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এতে যুব সমাজ ফুঁসে উঠেছিল।

এ সময় তিনি গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে শহীদ ও আহত ছাত্র, যুবক, শ্রমিকসহ সবার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক প্রয়াত শরিফ ওসমান বিন হাদির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, যারা চায় না মানুষের অধিকার তাদের কাছে ফিরে যাক, বাংলাদেশ সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, তারাই তাঁকে (ওসমান হাদি) দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। এই বয়সে এভাবে বিদায় নিয়ে সে বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছে। হাদির মতো আরও নেতা জন্মালে এই দেশ কখনো পথ হারাবে না।

এ সময় জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।