আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির মধ্যেই ইউনিয়নে ইউনিয়নে বিএনপির পদযাত্রা আজ
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির মধ্যেই আজ শনিবার দেশের ইউনিয়নে ইউনিয়নে ‘পদযাত্রা’ করবে বিএনপি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশের গ্রামপর্যায়ের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা এ কর্মসূচির লক্ষ্য বলে দলটির নেতারা বলছেন। বিএনপি ছাড়াও সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট একযোগে এ কর্মসূচি পালন করবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির কারণে গ্রামপর্যায়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে নানা শঙ্কা কাজ করছে। এরপরও তাঁরা ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে ভিন্ন ধরনের এ কর্মসূচি সফল করতে ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে। একেকটি ইউনিয়নে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে সেই ইউনিয়নের এক জায়গায় সমবেত হয়ে তারপর পদযাত্রা শুরু করতে বলা হয়েছে। পদযাত্রার রাস্তা হবে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পথ। এর মধ্যে জনবহুল এলাকা, বিশেষ করে গ্রামের হাটবাজারগুলোর ওপর দিয়ে পদযাত্রা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে দেড় কোটি প্রচারপত্র ছাপা হয়েছে। তা আজ সারা দেশে বিলি করা হবে পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে। সরকারের ‘গণবিরোধী’ কার্যকলাপ, দুর্নীতি, দলীয়করণ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ এবং চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি—এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে প্রচারপত্রে। তাতে জনগণের প্রতি এই বলে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, ‘আসুন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনি এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত করে জনগণের কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করি।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম সরকারবিষয়ক সহসম্পাদক বেলাল আহমেদ তাঁদের কর্মসূচির প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশেই আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ দেওয়ায় সবখানেই সাংঘাতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর পরেও কর্মসূচি হবে।’
বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ইউনিয়নে ইউনিয়নে পাল্টা ‘শান্তি সমাবেশের’ কর্মসূচি নেওয়ায় সারা দেশেই একটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তবু বিএনপির নেতারা পদযাত্রার কর্মসূচিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এ কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য একটি কার্যকর পন্থা। তাই এ কর্মসূচিকে ভবিষ্যতে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের ভিত্তি হিসেবে দেখছেন বিএনপির নীতনির্ধারকেরা। এ কর্মসূচিতে ‘দুর্নীতি’, ‘ভোট ডাকাতি’, নেতা-কর্মীদের হত্যা, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করবেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রি শিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন মোল্লা কর্মসূচি নিয়ে আশঙ্কার কথা জানান। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংঘাত এড়াতে আমরা কোন জায়গা থেকে পদযাত্রা করব, সেটি এখনই কাউকে বলছি না।’
৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি এ পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। একই দিন গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টিও গতকাল পৃথক সমাবেশে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে যুগপৎ পদযাত্রার কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এ কর্মসূচির আগে বিএনপি রাজধানী ঢাকায় চার দিনের পদযাত্রা করে। আগামীকাল রোববারও রাজধানীর শ্যামলী থেকে বছিলা পর্যন্ত পদযাত্রার কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচির দিকেই সবার দৃষ্টি।
সিলেটের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আকুন আলী জানান, তাঁরা ইউনিয়নের টোকের বাজার থেকে রাধানগর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পথ পদযাত্রা করবেন। কয়েক হাজার মানুষ নিয়ে বেলা ১১টা থেকে এ পদযাত্রা শুরু হবে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ। ফলে আশা করছি, আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না।’
অবশ্য গত রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, পদযাত্রার কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে গ্রামপর্যায়ে গ্রেপ্তার শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার ও আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীনসহ ঢাকায় ২৫ জন এবং যশোর, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ৭১ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।
কর্মসূচি ঘিরে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করার অভিযোগ করেন বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়নের নেতারা বাজারে পর্যন্ত যেতে পারছেন না। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ভয় দেখাচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। সরকার এতটাই ভীত যে পদযাত্রার মতো কর্মসূচিকেও সহ্য করতে পারছে না।