‘ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে করা হচ্ছে পরিষ্কার

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে টাঙানো হয়েছে ‘ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ লেখা ব্যানার। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলের চিত্রছবি: মোহাম্মদ মোস্তফা

‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে দুটি ব্যানার টাঙিয়ে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় এক বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর গতকাল বুধবার থেকে ১০তলা এই ভবন পরিষ্কার করা শুরু হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, তৃতীয় তলায় জমে থাকা ইটের খোয়া ও ময়লা–আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করা হচ্ছে। দোতলায় জমে থাকা আবর্জনা ইতিমধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে গতকাল সকাল থেকেই নিচতলা পরিষ্কার করা হয়। ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি ভবনটি পরিষ্কারের কাজ করছেন। তাঁরা বলেছেন, পুরো ভবন তাঁরা পরিষ্কার করবেন। ভবনটির সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামের ব্যানার টাঙানের বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিরা প্রথম আলোকে বলেন, পুরো ভবনটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই ভবনে গত বছরের জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অফিস, শহীদ পরিবারের অফিস করা হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলের চিত্র
ছবি: মোহাম্মদ মোস্তফা

ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সরকারি জমি দখল করে এই ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল, এমন দাবি করে তাঁরা আরও বলেন, পুরো ভবনের কোন তলায় কী হবে, তা ছাত্র–জনতা ঠিক করে নেবে। সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিদের কেউ নিজেদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। এদিকে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট নামের এই প্রতিষ্ঠান কে তৈরি করেছে, এর সঙ্গে কারা যুক্ত, কীভাবে এই নাম এসেছে—সেসব প্রশ্নে ওই ব্যক্তিরা কিছু বলতে রাজি হননি।

গুলিস্তান এলাকায় ১০ তলাবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আগস্ট মাসজুড়ে চলে লুটপাট। তখন থেকে এই ভবন অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।

কার্যালয়ের সামনের দুজন দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, পোড়া এই ভবনের নিচতলা এত দিন শৌচাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ত। ভবনটির সামনে দিয়ে চলতে গেলে নাক চেপে যেতে হতো।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিচতলায় পরিষ্কার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলের চিত্র
ছবি: মোহাম্মদ মোস্তফা

ভবনের নিচতলা পরিষ্কার করার পর আজ বিকেলেও সেখানে উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়। নতুন ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়ার কারণে উৎসুক অনেকেই এর ছবি তুলছেন। ভবনটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক পথচারী কিছুটা সময় পরিস্থিতি দেখে যাচ্ছেন।

কার্যালয়টির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছবি তুলছিলেন আবদুস ছাত্তার নামের এক পথচারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি দল স্বৈরাচারী হয়ে উঠলে পরিণতি কী হতে পারে, এই ভবনটি দেখলেই তা বোঝা যায়। দেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের এমন করুণ পরিণতি থেকে যাতে অন্যরা শিক্ষা নেন, সেই আহ্বান জানান তিনি।