তারেককে একতরফাভাবে সাজা দেওয়ার চেষ্টা চলছে, অভিযোগ বিএনপির

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘একতরফাভাবে’ সাজা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একইভাবে গত সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে, অর্থাৎ ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে ‘অন্যায়ভাবে’ সাজা দেওয়া হয়েছিল।

আজ শনিবার সকালে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এক মামলায় তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হলো।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে, হয়রানি করে নেতা-কর্মী ও জনগণের মনোবল বিনষ্ট করতেই সরকারের ইঙ্গিতে মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে। যেসব অভিযোগে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তা অবান্তর, ভিত্তিহীন ও অমূলক। চার্জ গঠন করে মামলার একতরফা যে রায় দেওয়া হবে, তা হবে প্রতিহিংসামূলক, ফরমায়েশি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব মামলা, অভিযোগ গঠন, আদেশ, রায় দিয়ে তারা তারেক রহমানের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত বা ডা. জোবাইদা রহমানকে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারবে না এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে বিভ্রান্ত বা নস্যাৎ করতে পারবে না।’

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তাঁর মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উৎস থেকে অর্জিত ৩৫ লাখ টাকার সম্পদ তাঁদের বৈধ উৎস থেকে অর্জন প্রমাণে ভিত্তিহীন রেকর্ড ও বক্তব্য উপস্থাপনে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় তারেক ও জোবাইদার পক্ষে আদালতে আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। তবে তারেক ও জোবাইদা পলাতক থাকায় আবেদনটি নাকচ করেন আদালত।

মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যেন আজ বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে যেসব সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোনো দলিল বা চুক্তিতে যেখানে তারেক রহমানের নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নেই, তাঁকে সেসব সম্পত্তির গায়েবি মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এমনকি তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের কর পরিশোধ করা সম্পদ নিয়েও কাল্পনিক অভিযোগ করা হয়েছে।

দেশের বিরাজমান ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র মহাতাণ্ডব দুদকের চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী, আমলা ও নেতা-কর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে বলেছি, এক–এগারো থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরানোর একটা স্কিম কাজ করেছে, যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গত সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি বলেন, এখনো ঠিক একই কায়দায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে একতরফাভাবে সাজা দেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।