সরকারে বসে আছেন, আপনারা কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ: মির্জা ফখরুল

য়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবদল আয়োজিত যুবসমাবেশে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: দীপু মালাকার

সরকারে বসে আছেন, আপনারা কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ—সরকারকে উদ্দেশ করে এই প্রশ্ন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন ভোট চোরের পর স্লোগান হচ্ছে ‘সংবিধান চোর’। এই কথাটা জোর দিয়ে বলতে হবে। সারা পৃথিবীর মানুষকে জানাতে হবে, তারা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে, অসাংবিধানিকভাবে সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতায় বসে আছে।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক বিশাল যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী যুবদল এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে সংলাপ নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। শর্ত বাদ দিয়ে এলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে কথা বলেছেন, এর জবাব দেন ফখরুল। তবে তার আগে তিনি ক্ষমতাসীনদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধ কি না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্‌–নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের অর্থবহ সংলাপের সুপারিশের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধিদল যাওয়ার আগে এক বিবৃতিতে পাঁচটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে সংলাপ। সেটার জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আমরা তখনই কোনো আলোচনা করতে রাজি আছি, যখন বিএনপি সব শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনায় আসবে। আমার প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কাছে যে আপনারা এ কথা বলছেন, সরকারে বসে আছেন, আপনারা কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ? এটা প্রমাণ করতে হবে আপনাকে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করছি, আপনারা সাংবিধানিকভাবে বৈধ নন। অসাংবিধানিকভাবে, সংবিধান পরিবর্তন করে, ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে এসে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে, অবৈধভাবে আপনি (প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে) ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন।’

এ প্রসঙ্গে ত্রয়োদশ সংশোধনীর আগে বিচারপতি খায়রুল হকের দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ের কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, যে রায়ের বদৌলতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছেন, সে রায়ে বিচারপতি খায়রুল হক একটা ছোট্ট রায় দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, এটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) প্রাসঙ্গিক নয়, তবে দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আরও দুটি নির্বাচন এই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। তবে শর্ত ছিল এখানে বিচারক রাখা যাবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, সেই রায়ের (সংক্ষিপ্ত রায়) ১৬ মাসে পরে পূর্ণাঙ্গ রায় বের হয়। কিন্তু সেটা ছিল সংক্ষিপ্ত রায়ের সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে কোনো মিল ছিল না। অন্যদিকে পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সংসদে আইনটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল) পাস করেছে। অথচ সব রাজনৈতিক দল বলেছে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের প্রক্রিয়া তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যে আপনারা সংবিধানের কথা জোর দিয়ে বলছেন, সবার আগে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, আপনি বৈধ নন। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, আগে পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন করুন।’

সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দলীয়করণ করার অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিচার বিভাগ, প্রশাসন—সবকিছু দলীয়করণ করা হয়েছে। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা জানি, আপনারা সবাই বেআইনি কাজ করতে চান না। আওয়ামী লীগই আপনাদের বাধ্য করছে, বেআইনিভাবে সাধারণ মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন করতে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা যে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রেখেছে, এর জন্য একদিন না একদিন তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিশেষ করে যেসব বিচারক অন্যায় আদেশ দিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই জনগণের সামনের এর জবাবদিহি করতে হবে।

এ্যানিকে গ্রেপ্তারের কারণ একটাই

কারাবন্দী বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন যে মামলা (এ্যানি) আছে। মামলা তো অনেকের আছে। গভীর রাতে দরজার ভেঙে তাঁকে বাসা থেকে গ্রেপ্তারের কারণ একটাই, উনি বক্তৃতায় চিটাগাংয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু কথা বলেছিলেন।’ মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কথা বলবেন, কথা শুনবেন না, তা তো হবে না। রাজনীতি যখন করেন, গণতন্ত্রের কথা যখন বলেন, আপনাকে কথা শোনার জন্য তৈরি থাকতে হবে। যখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অশালীন ও অরুচিকর মন্তব্য করেন, তখন এই দেশের মানুষের সেই স্বাধীনতা আছে সাংবিধানিক অধিকার আছে তারাও যেকোনো লোকের বিষয়ে কথা বলতে পারে।’

৪৩ লাখ আসামি যদি ঢাকামুখী হন

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ ৪৩ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা যদি ঢাকামুখী হন, এই সরকারের খবর থাকবে? প্রয়োজন হলে ৪৩ লাখ মানুষকে ঢাকায় আনা হবে।’

পুলিশ এবং আদালত একজোটে বিরোধী দলকে দমনের জন্য নেমেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দোষারোপ করেন। গয়েশ্বর রায় বলেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শোনার জন্য যিনি গণভবনে বসে আছেন, তাঁকে (খালেদা জিয়া) বিদায়ের আগে তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) পতন ঘটাতে হবে। গণতন্ত্রের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ প্রকাশ্যে হবে, গেরিলা যুদ্ধও হবে। এর জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

আজ সোমবার ঢাকার একটি আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় সূত্রাপুর থানার পুলিশ সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুস সাত্তারকে গ্রেপ্তার করে। একই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আবদুস সালাম দাবি করেন, তাঁরা ফেরার সময় পুলিশ বিনা পরোয়ানায় আবদুস সাত্তারকে পেছন থেকে ধরে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার উল্লেখ করে আবদুস সালাম বিএনপির মহাসচিবের উদ্দেশে বলেন, ‘পুলিশ আইন না মানলে আমাদের আইন মানতে হবে কেন? আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করতে হবে।’

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, ফরহাদ হালিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরু করার কথা থাকলেও সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে পল্টনে জড়ো হন। একপর্যায়ে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরের পুল মোড় পর্যন্ত ভরে যায়। এ সময় ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ওই এলাকায় ব্যাপক যানজট দেখা দেয়।