‘দক্ষিণপন্থীদের উত্থান’ নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্য ভুল বার্তা দেবে: ইসলামী আন্দোলন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতীক

রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থানের ইঙ্গিতে নিজের উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা বলেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তাঁর এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা দেবে বলে মনে করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

আজ শনিবার রাতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজকে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব “দক্ষিণপন্থীদের উত্থান” সম্পর্কিত এক প্রশ্নে যেভাবে উত্তর দিয়েছেন, তাতে জনমনে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা দেবে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার আজ প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। তাতে একটি প্রশ্ন ছিল, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর দেশের রাজনীতিতে কি দক্ষিণপন্থীদের উত্থান হতে যাচ্ছে? বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন। তিনি কী দেখেন? জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমিও দেখছি। সে জন্য আমি উদ্বিগ্ন। আমি বাংলাদেশকে সব সময় একটা সত্যিকার অর্থে উদারপন্থী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই এবং এখানে গণতন্ত্র হবে সবচেয়ে বড় বিষয়। সেই জায়গায় যদি এখন এমন এমন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হয়, যারা গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না। পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে করে না। আবার তারা নিজেরা জোর করে চাপিয়ে দিতে চায় মতবাদকে, এটা নিঃসন্দেহে অ্যালার্মিং সিচুয়েশন। কিছু কিছু দলের মধ্যে এমনও কথা আছে যে মহিলাদের তারা কিছুতেই সামনে আনতে চায় না। মহিলাদের তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা তো দূরের কথা, তারা সামাজিক ক্ষমতায়নও করতে চায় না। এসব দলের যদি উত্থান হয় এই দেশে, তাহলে তো পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।’

বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমদ বলেন, ‘আমরাও বাংলাদেশে রাজনীতি করছি। আমরা তো এমন কোনো শক্তির উত্থান দেখছি না। তিনি যদি এমন কোনো শক্তির উত্থান দেখেন, তাহলে তা পরিষ্কার করে বলা উচিত। কিন্তু তা না করে অনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এমন নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করাকে আমরা অশুভকর বলে মনে করছি। তাঁর এই বয়ান পতিত ফ্যাসিবাদের বয়ানকে সমর্থন করে।’

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদীরা তাদের ফ্যাসিজমকে বৈধতা দিতে তাদের অবর্তমানে এমন শক্তির উত্থানের আশঙ্কাকে বড় করে দেখাত। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এমন শক্তির উত্থান হয়েছে বলে উদ্বিগ্ন হন, তাহলে আওয়ামী লীগের বক্তব্যই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। অথচ এটা সত্য নয়।

ইউনুস আহমদ আরও বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার জন্য দেশকে ‘পন্থা ও পন্থীতে’ বিভক্ত করে রেখেছিল। স্বাধীনতাপন্থী, পাকিস্তানপন্থী, দক্ষিণপন্থী, বামপন্থী—ইত্যাদি নানাবিধ পন্থার রাজনীতি করে ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের পন্থাকে সামনে এনে তারা জুলুম-নির্যাতন, হত্যা-গুমকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। জুলাই অভ্যুত্থান সেই ‘পন্থার’ রাজনীতিকে ভেঙে দিয়ে অধিকারভিত্তিক রাজনীতির নয়া জমানার সূচনা করেছে।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব আরও বলেন, জুলাইয়ের আগে থেকেই দেশের সব ধারার রাজনৈতিক শক্তি এক টেবিলে বসে একই সুরে কথা বলেছে। তখন ডানপন্থী, ইসলামপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী—সবাইকে একত্রে আন্দোলন করতে দেখেছে দেশবাসী। চব্বিশের জুলাই আন্দোলনেও সব পন্থার মানুষ কাঁধে কাঁধ রেখে ফ্যাসিবাদের বুলেটের মোকাবিলা করেছে।

ইউনুস আহমদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরও রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য-বিবৃতি ও সংস্কার এজেন্ডায় পরিষ্কার যে কেউ নির্দিষ্ট কোনো পন্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে না। বরং সবার প্রধান বিবেচ্য হচ্ছে সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে দেশে নতুন ফ্যাসিবাদ তৈরির পথ বন্ধ করা।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন পন্থাভিত্তিক নয়; বরং অধিকারভিত্তিক। এমন সুবর্ণ সময়ের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার উত্থানকে বড় আকারে উপস্থাপন করা এবং তার ভিত্তিতে ভীতি ছড়ানো কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আরও পড়ুন