সোয়া ঘণ্টা পর রাস্তা ছাড়ল ছাত্রলীগ

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কমিটি ঘোষণার দাবিতে কলেজের পার্শ্ববর্তী সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন
ছবি: আসিফ হাওলাদার

রাজধানীর ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার দাবিতে কলেজের পার্শ্ববর্তী সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন কয়েক শ নেতা-কর্মী। ঢাকা কলেজের ফটকের সামনেও বাঁশ ফেলে রাস্তা আটকে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রোববার রাত ১১টা থেকে এ অবরোধ চলে রাত সোয়া ১২টা পর্যন্ত।

অবরোধে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, অজানা ও রহস্যজনক কারণে ঢাকা কলেজে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। কিন্তু যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে এবং নেতাদের প্রটোকলে ঢাকা কলেজের কর্মীদের ঠিকই ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের ক্যান্টনমেন্ট। কমিটি না হওয়ায় পরিশ্রমী ও ত্যাগী কর্মীদের অনেকের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়েছে। তাই অবিলম্বে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

অবরোধে ‘দাবি মোদের একটাই, ঢাকা কলেজে কমিটি চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মো. আকাশ নামের এক কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা কলেজ শাখার কমিটি ঘোষণার আশ্বাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা জানিয়ে দেন যে কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নিষেধ থাকায় ঢাকা কলেজে কমিটি হচ্ছে না।

আগামীকাল মঙ্গলবার ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন। এর মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কমিটি ঘোষণার দাবিতে কলেজের পার্শ্ববর্তী সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন
ছবি: আসিফ হাওলাদার

অবরোধ চলাকালে রোববার রাত ১১টার কিছুক্ষণ পর গাড়িতে করে সায়েন্স ল্যাব মোড় হয়ে ধানমন্ডির দিকে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বি এম মোজাম্মেল হক। ঢাকা কলেজ শাখার নেতা-কর্মীরা তাঁদের গাড়ি থামান। নেতারা গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে ঢাকা কলেজের কমিটি ঘোষণার অনুরোধ জানালেও আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতা কোনো আশ্বাস না দিয়েই চলে যান।

এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খানের গাড়ি আটকান ঢাকা কলেজ শাখার বিক্ষুব্ধ একদল নেতা-কর্মী। তাঁরা তাঁকে অবিলম্বে ঢাকা কলেজ কমিটি ঘোষণা করতে বলেন। কিন্তু আল নাহিয়ান তাঁদের কোনো আশ্বাস দেননি।

রাত সোয়া ১২টার দিকে হ্যান্ড মাইকে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা বলেন, ‘আমরা আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, প্রাণপ্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জননেতা ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলে আমাদের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। আশা করি, আমাদের কমিটি দেওয়ার জন্য আগামীকালের মধ্যে তিনি (নানক) একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। আমাদের প্রাণপ্রিয় এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমাদের বিশ্বাস, আগামীকালের মধ্যে সুন্দর একটা কমিটি উপহার পাব। এখন আমরা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে হলে চলে যাব।’

এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে কলেজের দিকে চলে যান। এ অবরোধের কারণে সোয়া ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ থাকায় সড়কে কিছুটা যানজট তৈরি হয়েছিল। কিছু গাড়ি বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছিল আর কিছু গাড়ি দুই দিকে অপেক্ষা করছিল। রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

প্রসঙ্গত, গত এক দশকে দুবার (২০১২ ও ২০১৭ সাল) ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল ঢাকা কলেজে। দুবারই অপ্রীতিকর ঘটনায় সেই কমিটি ভাঙতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক দশক পর ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ৫৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে ফুয়াদ হোসেন ওরফে পল্লবকে সভাপতি ও সাকিব হাসান ওরফে সুইমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একটি ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আসাদুজ্জামান আল ফারুক নামের এক ছাত্র নিহত হন। এর পরদিনই ঢাকা কলেজ শাখার কমিটি স্থগিত এবং সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাত নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এরপর প্রায় তিন বছর ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ছিল না। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর নূরে আলম ভূঁইয়া ওরফে রাজুকে আহ্বায়ক করে তিন মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর দুই মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আহ্বায়ক নূরে আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক হিরণ ভূঁইয়ার অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষের সময় কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর এবং সাতটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন নেতা-কর্মীরা। ওই ঘটনায় সেদিনই আহ্বায়ক নূরে আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক হিরণ ভূঁইয়াসহ ঢাকা কলেজ কমিটির ১৯ নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ কমিটি বিলুপ্ত বা স্থগিত না করা হলেও ক্যাম্পাসে ‘বিলুপ্ত কমিটি’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

২০১৭ সালের ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের আর কোনো কমিটি হয়নি।