প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে মাঠ বিএনপির দখলেই থাকবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা বলেন, বিএনপির লাগাতার কর্মসূচি দেখে সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আর সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যবসায়ী ছাড়া সাধারণ জনগণ এই সরকারের পাশে নেই।
আজ শনিবার রাজধানীর পল্লবীর কালশী এলাকায় আয়োজিত জনসভায় বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জনসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে পল্লবীর এই সভার নির্ধারিত তারিখ ছিল গত ১৫ সেপ্টেম্বর। সেদিন দুই দফায় সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করেও আওয়ামী লীগের বাধার মুখে সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। সেদিন দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। তাই সেই সমাবেশ আজ হয়।
আজ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই সভা করার কথা মিরপুর ৬ নম্বরে। আওয়ামী সন্ত্রাসী ও সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশের সমন্বয়ে সভা পণ্ড করা হয়েছিল। সেই পল্লবীতে দাঁড়িয়েই আজ সভা করছি। ঢাকার রাজপথ, দেশের সব অঞ্চলের সড়ক বিএনপির দখলে চলে গেছে।
এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। সব দলের একটাই লক্ষ্য, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা।
গত বৃহস্পতিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের জ্বালানিসংকটের কারণে আদি যুগে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি সবাইকে চেরাগ জ্বালিয়ে চলার প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ চেরাগের দেশ হবে না। তার আগেই শেখ হাসিনার বিদায় হবে।’
বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশ এবং সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধির একটি চক্র চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু দাবি করেন। তিনি বলেন, এই চক্র আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-চুরির উচ্ছিষ্টভোগী। আওয়ামী লীগের লোকজনের পকেট ভরতে বিদ্যুৎ প্রকল্প করেছেন, টাকা পাচার করেছেন। অথচ এখন দেশে বিদ্যুৎ নেই।
২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগকে বিনা ভোটের সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও দোষ আছে। আমরাই এমন নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছিলাম। এবার এমন নির্বাচনের স্বপ্ন বৃথা যাবে।’ আগামী ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের দিকনির্দেশনা আসবে বলে তিনি জানান।
সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনে পুড়ে বিএনপির প্রতিটি কর্মী খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে দাবি করে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি লাঠিসোঁটার রাজনীতি করে না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরে হামলা হয়েছে। আত্মরক্ষার্থে লাঠি হাতে নিতেই তারা (আওয়ামী লীগ) ঘাবড়ে গিয়েছে। তাদের নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট ভয়ভীতি ফুটে উঠছে।
আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে বলে দাবি করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আজকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রেখেছে, আমরা দেখিয়েছি মাঠ কাদের দখলে। ’১৪ সালের ভোট ডাকাতি ও ’১৮ সালের রাতের ভোট আর চলবে না। ১৪-১৮ সালের নির্বাচনের খোয়াব আর দেখবেন না।’
আমাদেরও দোষ আছে। আমরাই এমন নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছিলাম। এবার এমন নির্বাচনের স্বপ্ন বৃথা যাবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘মিরপুর ৬ নম্বরে সভা করতে দেননি। আজকেও বাধা দেবেন বলেছিলেন। আজকে কোথায় আওয়ামী লীগ। কাউকে তো দেখলাম না। আক্রমণ করে ঠেকানো যায় নাই। ওরা বাঁশ নিয়ে এসেছিল, আমরা বাঁশ দেখালাম। আওয়ামী লীগ লেজ তুলে পালাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলে, সভায় লাঠি আনবেন না। ওরা লাঠি আনলে, আমরাও লাঠি আনব। ওদের লাঠি থামান, হেলমেট থামান।’
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বনানীতে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলার পর ঢাকার কর্মসূচিগুলোতে লাঠি-রড হাতে হাজির হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আজকের সভাতেও বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সভায় আসেন। নেতা-কর্মীদের অনেকের হাতে ছিল বাঁশ, কাঠের ফালি ও রড। নেতা-কর্মীরা বলেন, হামলার ভয়ে আত্মরক্ষার্থে বাঁশ-লাঠি নিয়ে এসেছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জয়নাল আবেদীন ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম, গত সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।