ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে ৫ দিন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে নির্বাচনকালীন মোতায়েন হিসেবে ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে পাঁচ দিন মাঠে থাকবেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের আগের তিন দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরদিন, অর্থাৎ ৯-১৩ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ মোতায়েন থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্র জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখানে এই কর্মপরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে ১২ ফেব্রুয়ারি।
পরিপত্রে বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও উৎসবমুখর করার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা। সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী ইতিমধ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মোতায়েন আছে, যা নির্বাচনের সময়ও অব্যাহত থাকবে। সরকার সামরিক বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়েছে, যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
ইসির পরিপত্রে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বাভাবিক মোতায়েন চলমান। এর বাইরে নির্বাচনকালীন মোতায়েন হবে ভোটের তিন দিন আগে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল ছাড়া সব বাহিনী ভোটের সময় পাঁচ দিন মোতায়েন থাকবে। আনসারদের ক্ষেত্রে এ মোতায়েন হবে ছয় দিন (ভোটের আগের চার দিন, ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিন)।
কোন বাহিনীর কত সদস্য মোতায়েন করা হবে, তা ইসির পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। পরিপত্রে বলা হয়, নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘লিড’ মন্ত্রণালয় হিসেবে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় ও তদারকি করবে। তাতে বলা হয়েছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধ, নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী যেকোনো কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাব্যতা অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি কাভারেজ নিশ্চিত করতে হবে। মাঠে ব্যবহৃত বডি-ওর্ন ক্যামেরার একটি ‘লাইভ ফিড’ নির্বাচন কমিশনের সমন্বয় সেলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ইসি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সব বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনে আইনশৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। ভোটের আগের চার দিন, ভোটের দিন ও ভোটের পরের দুই দিন এই সেল কাজ করবে।
১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে। এর আগে ৯ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছিল, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন করতে বলেছে ইসি
সারা দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়গুলোয় সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছে ইসি। এসব কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোয় নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালামাল, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব কার্যালয়ে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালামালের সুরক্ষাসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আবেদন আহ্বান
আগামী জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণে আগ্রহী আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যম নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারবে। বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইসি। তাতে বলা হয়েছে, আগ্রহী আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক বা পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি গণমাধ্যমকে ইসির ‘আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যমের’ জন্য প্রণীত নীতিমালার আলোকে আবেদন করতে হবে। এই নীতিমালা ও সংশ্লিষ্ট ফরমগুলো ইসির ওয়েবসাইটে (www.ecs.gov.bd) পাওয়া যাবে।
তফসিল সংশোধন
ইসি বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করে। তবে ভোট গ্রহণের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারিই থাকছে। ইসি সূত্র জানায়, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সময় ও আপিল নিষ্পত্তির সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী, আপিল করা যাবে ৫-৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০-১৮ জানুয়ারি। এর আগে আপিলের শেষ সময় ছিল ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর আপিল নিষ্পত্তির সময় ছিল ১২-১৮ জানুয়ারি।