সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে: ইসি

আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভার পর নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসি। আজ রোববার নির্বাচন ভবনেছবি: প্রথম আলো

সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শঙ্কা থাকলেও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ রোববার তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইসির বৈঠক এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভার পর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.) সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলের ভেতরে, একাধিক দলের মাঝে...ঝুট ঝামেলা এগুলো আছে। কিন্তু সার্বিকভাবে যদি আমরা বলি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই আছে।’

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ঠিক রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। তিনি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচার চালাচ্ছিলেন।

হাদিকে গুলি করার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দল প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল। হাদিকে দাফনের পরদিন আজ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মো. গোলাম পরওয়ার বলেন, তিন শ আসনের প্রার্থীরা এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

নির্বাচন কমিশন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইলেও ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বলে মনে করে ইসি। তবে সানাউল্লাহ বলেন, ‘যাঁরা আমাদের উৎসবকে বিঘ্নিত করতে চান, তাঁরা ব্যর্থ হবেন। উৎসবের পরিবেশ ফেরত আসবে।’

ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ক্ষোভ–বিক্ষোভের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনা পরোক্ষভাবে নির্বাচনী পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলেছে বলে স্বীকার করছে ইসি। সানাউল্লাহ বলেন, ‘বৃহত্তর আবেগ ও অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দুষ্টচক্র যে কাজটি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে মর্মে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আশা হয়েছে মর্মে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

যাঁরা আমাদের উৎসবকে বিঘ্নিত করতে চান, তাঁরা ব্যর্থ হবেন। উৎসবের পরিবেশ ফেরত আসবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, নির্বাচন কমিশনার

এসব ঘটনাসহ ময়মনসিংহে একজনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাঁরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করছেন। জনমনে যাতে স্বস্তি ফেরত আসে, মানুষ যাতে আশ্বস্ত হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো যাতে যথাযথভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে, সে জন্য ইসি বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি তফসিল অনুযায়ী দল ও প্রার্থী যাতে নির্বিঘ্নে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন, সে নির্দেশনা বাহিনীগুলোকে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে আলোচনায় দুপুরে ইসিতে বৈঠক হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, তিন বাহিনী প্রধানদের উপযুক্ত প্রতিনিধি, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি ও র‍্যাবের মহাপরিচালক, এসবি ও সিআইডির অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক অংশ নেন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। সভায় ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কাছে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত নাশকতার ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে চায়। তাঁদের জানানো হয়, এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এই সভার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নির্বাচন ভবনে যান। তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।

এই দুটি বৈঠকের পর বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে বিকেলে নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা ছিল। তবে অনেক মানুষ এই ভালো উদ্যোগের খারাপ সুযোগ নিয়েছেন। তাই নির্বাচন কমিশন এখন বাহিনীগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।

‘আমরা মানবিক হব যাঁরা মানবিক তাঁদের প্রতি। যাঁরা দস্যুতা করতে চায়, ভ্যান্ডালিজম করতে চায়, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, আমার ভাইকে হত্যা করতে চায়, তাঁদের প্রতি মানবিক হওয়ার দরকার নেই,’ বলেন তিনি।