আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ খন্দকার মাহাবুব হোসেনও গায়েবি মামলার হাত থেকে রক্ষা পাননি। যখন তাঁর বয়স ৮৩ বছর, তখন তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর বোমা হামলার মামলা দেওয়া হয়েছে। এমন মামলায় নিম্ন আদালত তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠন করেছেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি মামলা বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে লড়েছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন গত ৩১ ডিসেম্বর মারা যান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন একজন পণ্ডিত ছিলেন। আইনের ওপর তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। অথচ এমন একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে পুলিশের ওপর বোমা মারার মামলায় আসামি করা হয়েছে। গায়েবি মামলায় তাঁর মতো একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একাধিক মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়।
গণতন্ত্র না থাকলে আইনের শাসন থাকে না মন্তব্য করে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই। এই সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের হয়রানি করছে। তিনি দাবি করেন, এক যুগে বিএনপির ৬০০ নেতা–কর্মীকে গুম করা হয়েছে। এক হাজারের বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
বিএনপির ধারাবাহিক গণসমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দেখে সরকার ভীত হয়ে পড়েছে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, বিএনপির ১০ দফার সারাংশ হচ্ছে, এই সরকারের পদত্যাগ। এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খন্দকার মাহবুব হোসেন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের একটি বিতর্কিত রায় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আবার সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে চাকরিচ্যুত করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আইনের অঙ্গনে প্রতিবাদের কোনো ঝড় ওঠেনি।’ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আলোচনা সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন সম্পর্কে তাঁর মামা ছিলেন। একজন সফল আইনজীবী হিসেবে তিনি অনেক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সামনের কাতারে থেকে লড়াই করে গেছেন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, আইনজীবী শরিফুজ্জামান ফরহাদ, আইনজীবী গরীবে নেওয়াজ প্রমুখ।