ইনু, বাদশা, মঞ্জুর হার, বিপর্যস্ত ১৪ দলের শরিকরা

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু (বামে), ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা (মাঝে) ও জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (ডানে)ছবি: কোলাজ: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগিতে পাওয়া ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতেই হেরে গেছেন ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।

শরিক দলগুলোর নেতারা এই বিপর্যয় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এবার আসন সমঝোতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জাসদ তিনটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পায়। তাদের চাওয়া ছিল ভাগে পাওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ শরিকদের সেই দাবি আমলে নেয়নি। এর ফলে ভাগে পাওয়া ছয়টি আসনে জেতার বিষয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তায়ই ছিলেন শরিক দলের প্রার্থীরা।

নৌকা প্রতীক ছাড়া জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেপির প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকেও ভোট করেছেন। ইসির তথ্য অনুযায়ী, জাসদের ৬৬, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ ও জেপির ১৩ প্রার্থী বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি।

৫ বছর আগে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের ৩ শরিক দল মিলে আসন পেয়েছিল ১০টি, জয়ী হয়েছিল ৬টি আসনে। সেবার শীর্ষ নেতাদের কেউ হারেননি।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সর্বশেষ তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। এবারও তিনি একই আসনে নৌকা নিয়ে ভোট করেন। কিন্তু এবার তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। তিনি মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে প্রার্থী হন। তাঁর পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে ২৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হাসানুল হক ইনু হেরে গেছেন কামারুলের কাছে।

রাজশাহী-২ আসনে চতুর্থবারের মতো জোটের মনোনয়ন পান ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এখানে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। ভোটে ফজলে হোসেন বাদশা হেরে গেছেন শফিকুর রহমানের কাছে।

পিরোজপুর-২ আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এবারও ভাগে পান এই আসন। তাঁরই একসময়ের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মহিউদ্দীন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। যিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়েও মহিউদ্দীনের কাছে হেরে গেছেন আনোয়ার হোসেন।

এবার প্রথমবার আসন ভাগাভাগিতে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোশারফ হোসেন নৌকায় ভোট করেন। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন।

জিতলেন মেননসহ দুজন

১৪-দলীয় জোট হওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এবার আওয়ামী লীগ তাঁকে ঢাকা-৮ আসন দেয়নি। তিনি উজিরপুর-বানারীপাড়া নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে জয়ী হন। এ আসনে আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।

সমঝোতায় পাওয়া জাসদের আরেক আসন বগুড়া-৪। জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম (তানসেন) জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। এখানে স্বতন্ত্র ভোট করেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা। ভোটে জিয়াউল হককে দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন রেজাউল করিম।