পাল্টা সমাবেশ না করলে বিরোধী দল শক্তিহীন ভাবতে পারে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের মত
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে এসেছিলেন দলটির শাহবাগ এলাকার কর্মী জাহিদুল ইসলাম। বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা শান্তি সমাবেশকে কীভাবে দেখছেন, এই প্রশ্ন করতেই বলে উঠলেন, বিএনপি ‘ভয়ংকর’ অপশক্তি। তাদের মাঠ ছেড়ে দিলে আবার আগুন–সন্ত্রাস শুরু করবে। তারা (বিএনপি) মনে করতে পারে রাজপথের শক্তিতে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে গেছে। এ জন্যই পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে আওয়ামী লীগ।
সোমবার দুপুরের পর যে সময় বিএনপি ঢাকায় তাদের দ্বিতীয় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে, একই সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করে। মঞ্চের পেছনের ব্যানারে লেখা ছিল ‘দেশব্যাপী বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্য ও তাণ্ডবের প্রতিবাদে’ শান্তি সমাবেশ। এতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। এদিকে সকালে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ একই বিষয়ে শান্তি সমাবেশ করে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে।
নিজ নিজ এলাকার নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিলসহ সমাবেশে আসেন নেতা–কর্মীরা। আগতদের অনেকের সঙ্গেই কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের প্রায় সবাই বলেছেন, বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে তাঁদের রাজপথে থাকার দরকার আছে। কারণ, সামনে নির্বাচন। রাজপথে থাকলে দলের কর্মীরা চাঙা হন। বিরোধীপক্ষকে কিছুটা ভয়ে রাখা যায়। দু-একজন বলেছেন, তাঁরা সমাবেশের কারণ কিংবা এর লাভ-ক্ষতি জানেন না।
কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা ফোরকান আলম বলেন, বিএনপি একচেটিয়া মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তাদের জবাব না দিলে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করবে। এ জন্যে পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে জবাব দেওয়া যায়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি সংঘাতের জন্ম দেবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংঘাতের নির্দেশনা নেই। ফলে আমাদের দিক থেকে ঝুঁকি নেই।’
বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি সমাবেশে লাভ দেখছেন গুলবাগের কর্মী হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, এত দিন দল ঝিমিয়ে পড়েছিল। এখন চাঙা হয়ে গেছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথিসহ অন্য বক্তারাও আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করতে দাঁড়িয়ে ব্যানার দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। যাত্রাবাড়ী এলাকার সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলামের ডাকনাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মনু তোমার ব্যানার নামাও। নতুবা খবর আছে!’ সাবের হোসেন চৌধুরীর ব্যানার ছিল না। কিন্তু তাঁর ছবিসংবলিত ব্যানার লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরীকে পচাতে চাও?’ অন্যদের ব্যানার না নামালে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় তিনি ব্যানার যারা না গোটাবে তাদের তালিকা করার নির্দেশ দেন।
ওবায়দুর কাদের তাঁর বক্তৃতায় জানান, এর পর থেকে শান্তি সমাবেশ বা সমাবেশের কর্মসূচিগুলো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে না করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় করা হবে।
বিএনপি নেতাদের মনের জোর কমে গেছে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মানুষের মনের জোর যখন কমে যায় তখন গলার জোর বেড়ে যায়। বিএনপি ও ফখরুলের গলার জোর বেড়ে গেছে। আগে সুর ছিল গরম এখন নরম কেন? বিক্ষোভ থেকে এখন নীরব পদযাত্রা কেন? পথ হারিয়ে বিএনপি পদযাত্রা শুরু করেছে। আন্দোলনের মরণযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’
আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় মাটি নেই বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কার মাটি আছে আর কার নেই, তা প্রমাণের পথ হলো নির্বাচন। আসুন নির্বাচনে। খালি মাঠে খেলব না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাই। খেলা হবে।’
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রসচিব ডোনাল্ড লু এর ঢাকা সফর শেষে বিএনপির হতাশায় ডুবে গেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আশা করেছিল একটা বৈঠক হবে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে চাপ দেবে। তিনি বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘কী বার্তা পেলেন? বৈঠক হলো না। নিষেধাজ্ঞা এল না। আর আসবেও না। অবস্থা বেগতিক দেখে মন খারাপ করে হাসপাতালে ভর্তি হলেন।’
এক-এগারোর সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেলের বাইরে ছিলেন কেন, এই প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ফখরুল ইসলামের পর্যায়ের নেতা সরকারের দালালি ছাড়া জেলের বাইরে থাকতে পারেন না।
দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় বিএনপি
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে, যা আগে কেউ করেনি।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপিকে মুসলিম লীগ না বানাতে চাইলে নির্বাচনে আসতে হবে। তিনি বলেন, রাজপথ বিএনপিকে ইজারা দেওয়া হবে না। বিএনপিকে রাজপথে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি বলেছে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামলে বিএনপি পালানোর পথও খুঁজে পাবে না।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি অভিযোগ করছে সরকার তাদের জোট ভাঙার চেষ্টা করছে। পিপীলিকাদের নিয়ে গড়া জোট নিয়ে চিন্তার সময় আওয়ামী লীগের নেই। বিএনপির মধ্যে ভাঙনের সুর বাজছে। আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের মধ্যেই ভাঙন দেখা দেবে, অস্তিত্ব–সংকটে পড়বে বিএনপি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী। পরিচালনা করেন রিয়াজ উদ্দিন। বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মহানগর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।