রাজনীতি ও সংসদ: অবিশ্বাস আর শক্তির লড়াই

বিদায়ী ২০২২ সালের শুরুতেও ঠিক আঁচ করা যায়নি শেষ দিকে এসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটা সংঘাতময় হয়ে উঠবে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ সংলাপ-সমঝোতার পথে না হেঁটে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ফলে মানুষের মনে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী বছরেও এর রেশ নিশ্চিতভাবেই থেকে যাবে। লিখেছেন ইমাম হোসেন সাঈদ

ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী পক্ষ থেকে যখন পাল্টাপাল্টি ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি আসে, তখন কাউকে আর বলে দিতে হয় না দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন যাচ্ছে।

দেশের রাজনীতিতে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থার সংকট আগেও ছিল, বিদায়ী বছরেও তা আরও প্রকট হয়েছে।

সমঝোতা ও সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে দুই পক্ষই রাজপথে শক্তির লড়াইকেই ‘একমাত্র’ সমাধান মনে করছে। এর ফল হচ্ছে রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে উঠছে, সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটছে। আর মানুষ আতঙ্ক-অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

বিদায়ী ২০২২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বারবার বলেছেন, ‘খেলা হবে’। তাঁর এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, পুলিশ ও প্রশাসন ছাড়া মাঠে নেমে দেখেন, কার শক্তি বেশি, পরীক্ষা হয়ে যাবে। দুই পক্ষের এমন মারমুখী মনোভাব বছরের শেষ দিকে এসে রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও স্বস্তিতে নেই। দলের ভেতরে সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়ছে। সরকারের ‘ছায়াতল’ থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টায় দলে অস্থিরতা-সংকট বেড়েছে। বামপন্থী দলগুলো সরকারবিরোধী অবস্থান নিলেও সবাই এক জোট হতে পারছে না।

বামপন্থী দলগুলোর বড় একটি অংশ নিজেদের মতো করেই আন্দোলন করছে। আরেকটি অংশ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদায়ী বছরে। ধর্মভিত্তিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ নয়, এক পক্ষ সরকারের সঙ্গে রয়েছে, অন্য পক্ষ বিএনপির আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।  

বিদায়ী ২০২২ সালের এই প্রবণতা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে মানুষ চায় রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ বজায় থাকুক, মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও দেশের স্বার্থে মানুষের নিরাপত্তা ও রুটি-রুজির স্বার্থে আলোচনার দরজা খোলা থাকুক।