দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, আমলা–পুলিশ মিলে দেশ চালাচ্ছে: আমীর খসরু

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
ফাইল ছবি

বর্তমানে দেশে কোনো রাজনৈতিক সরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকদের কোনো ভূমিকা নেই। একদল দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, আমলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে দেশ চালাচ্ছে।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। ‘সিরাজুল আলম খান এবং আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বলে কোনো রাজনৈতিক দল আছে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চরিত্র অবশিষ্ট নেই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শিখেছে ভোট চুরি, টেন্ডারবাজি, জায়গা দখল আর মাস্তানি করে কীভাবে এলাকার দখলদার হিসেবে টিকতে হয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদেরা দেশ ও দল চালাতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

আইন করে দেশে দুর্নীতি করা হচ্ছে দাবি করে আমীর খসরু বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে লাখ লাক কোটি টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক লোপাট করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে লুটপাটের অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান গত ৯ জুন মারা যান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম তিনি। সভায় সিরাজুল আলম খানের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা হয়।

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সিরাজুল আলম খান সঠিক জায়গা পাবেন কী না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আমির খসরু মাহমুদ। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদেরা যখন ইতিহাস রচনার চেষ্টা করেন, তা আর ইতিহাস থাকে না। এখন যেমন অনির্বাচিত ক্ষমতাধর রাজনীতিকেরা ইতিহাস রচনা করছেন। এটিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলা যেতে পারে, ইতিহাস নয়।  

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চুরি হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কর্তৃত্বকে চুরি করেছে আওয়ামী লীগ। এর জন্য ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে আওয়ামী লীগকে।

আওয়ামী লীগ ইতিহাসের নামে ‘রম্য রচনা’ তৈরি করছে বলে দাবি করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে আওয়ামী লীগ, তারা এর ধারেকাছে নেই। আবার ক্ষমতায় থাকতে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ১৯৭৩ সাল থেকে আওয়ামী লীগ যা করেছে, তা স্বীকার করে অন্য দলের সমালোচনা করতে হবে। অন্য দলের সমালোচনা করে তারা নিজেরা দায়মুক্ত হতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের দায়মুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সভায় ‘সিরাজুল আলম খান ও আগামীর বাংলাদেশ’ বিষয়ে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ। তাতে বলা হয়, সিরাজুল আলম খান ও আগামীর বাংলাদেশ এক সুতায় গাঁথা। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা–অন্তঃপ্রাণ, দেশপ্রেমিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। সিরাজুল আলম খান যে রাজনৈতিক ধারণা দিয়েছেন, তাতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিপরীতে জনগণের অধিকার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বিকাশ ঘটবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।