ইসলামী আন্দোলনের মতবিনিময়ে আ.লীগ বাদে সব দলকে আমন্ত্রণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামীকাল শনিবার বিএনপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছে। বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা সব দল, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতাকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে চরমোনাই পীরের এই দল। তবে ইসলামী আন্দোলন তাদের মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানায়নি।

১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন। সেখানে ভোটের দিন তাঁর ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে দলটির নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তাঁরা ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল–সমাবেশ করছেন।

বরিশালে দলের নেতার ওপর হামলার ঘটনায় সরকারবিরোধী একটা অবস্থান তুলে ধরছে ইসলামী আন্দোলন। দলটির নেতারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এর অংশ হিসেবে ইসলামী আন্দোলন শনিবার বিভিন্ন দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছে। দলটির পক্ষ থেকে তাদের মতবিনিময় সভার জন্য বিএনপির মহাসচিব, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ঢাকার গুলিস্তানে ইম্পেরিয়াল হোটেলে শনিবার সকাল ১০টায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে সভাপতিত্ব করবেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন নেই। চরমোনাই পীরের দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইসলামী আন্দোলনকে পাশে পেতে বিএনপির কয়েকজন নেতা গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের মাহফিলেও অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তখন ইসলামী আন্দোলন বিএনপির ডাকে সাড়া দেয়নি।  

বিএনপিতেও ইসলামী আন্দোলনকে নিয়ে সন্দেহ ছিল। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে ইসলামী আন্দোলন—এই সন্দেহ ছিল বিএনপি নেতাদের। বিএনপিসহ বিভিন্ন দল যখন বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অবস্থান নিয়েছে, তখনো ইসলামী আন্দোলন স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

বরিশালে দলের প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনার পরই ইসলামী আন্দোলন বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এমন পটভূমিতেই ইসলামী আন্দোলন বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করতে চাইছে।  

ইসলামী আন্দোলন যেহেতু শুরু থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কৌশলগতভাবে স্বতন্ত্র অবস্থান অবলম্বন করেছে, যা ক্ষমতাসীনদের জন্য সহায়ক ছিল বলে বিএনপি মনে করে। ফলে হঠাৎ দলটির অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে দেখছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির যে প্রতিনিধিদল চরমোনাই মাহফিলে গিয়েছিল, ওই দলে ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন স্বপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন যতক্ষণ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখবে, ততক্ষণ আমরা তাদের সরকারবিরোধী শক্তি হিসেবে বিবেচনা করব। পাশাপাশি তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করব।’

দুই মাস আগে ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছে প্রথম আলো। ওই সময় দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মৌলিক দাবি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, রাষ্ট্রকে একটি প্রকৃত কল্যাণকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে তাঁরা রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চান। এ জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য। এ জন্য তাঁরা জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বরিশালের সিটি নির্বাচনের পর হঠাৎ করে দলটির অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রথম আলোকে বলেন, শনিবারের মতবিনিময় সভার জন্য বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দল হিসেবে জামায়াতকে আমন্ত্রণ না জানানো হলেও দলটির নেতা (কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য) খলিলুর রহমান মাদানীসহ বেশ কয়েকজন আমন্ত্রিত হয়েছেন। বিশেষ করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর হামলার পর যাঁরা সহানুভূতি জানিয়েছেন, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের নেতারা জানান, মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করতে পারে চরমোনাই পীরের দলটি। এ ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন আগের মতো স্বতন্ত্র অবস্থানে নাকি রাজনৈতিক কোনো জোটে যুক্ত হবে, সেটি এ সভার পর অনেকটা স্পষ্ট হবে।