ঈদযাত্রায় এক দিন একটু সমস্যা হলে কী আসে-যায়: ওবায়দুল কাদের

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরফাইল ছবি

গত ঈদুল ফিতরে যানজটের ভোগান্তি এক দিন হয়েছিল। সেটি ছিল পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ছুটির দিন। ধাপে ধাপে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ছুটি দেওয়ার বিষয়টি বলা হলেও তা মানে না মালিকপক্ষ। সাংবাদিকদের এ ধরনের প্রশ্নে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এক দিন একটু সমস্যা হোক না, হোক। বাড়ি যাবে (লোকজন) আনন্দ করে, সেখানে এক দিন কষ্ট হলো, তাতে কী আসে–যায়।’

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ-নির্বিঘ্ন করার জন্য করণীয় নির্ধারণসংক্রান্ত সভায় ওবায়দুল কাদের এমন মন্তব্য করেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে এই সভা হয়।

যানজট-দুর্ঘটনা নিয়ে লেখালেখি হলেও দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নয়ন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রশংসা নেই বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকতার নামে অনেকে অপকর্ম করে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ঈদে গার্মেন্টস ছুটি দিলে হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে যান। এতে যানজট বাড়ে। এ সময় গাজীপুর ও চন্দ্রায় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার যানজটের আরেকটি বড় উৎস বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বৃষ্টির সময় এসেছে। এখন কিসের খোঁড়াখুঁড়ি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ ঈদের সময় বন্ধ রাখতে হবে।

সারা দেশে নির্মাণাধীন রাস্তার কাজ ঈদের সাত দিন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যানজটের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশের পথগুলোয় নজরদারি বাড়াতে হবে। ঈদযাত্রায় যেসব বিষয় প্রকট সংকট তৈরি করে, সেগুলো আলাপ করে সমাধানের নির্দেশনা দেন তিনি।

ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনাই সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা বলে সভায় উল্লেখ করেন সেতুমন্ত্রী। ঈদের পর (ফিরতিযাত্রা) সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মনোযোগ কমে যায় বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বেশি ট্রিপ দেওয়ার জন্য গাড়িগুলো গতি বাড়িয়ে দেয়। রাজনৈতিক পরিচয়ে ভয় না পেয়ে সারা দেশে সব মোটরসাইকেল আরোহীর জন্য হেলমেট নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন তিনি।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতাধীন ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পাশাপাশি জাতীয় মহাসড়ক ও করিডরের মেরামত-সংস্কারের কাজ আসন্ন ঈদের সাত দিন আগেই শেষ করার নির্দেশনা দেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী।

সভা সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের ওপর বা এর পাশে অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দেওয়ার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয় বলে উল্লেখ করা হয়। তাই উল্লিখিত স্থানে পশুর হাট না বসানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিআরটিএর তথ্যমতে, মহাসড়কে সর্বমোট ২১৭টি পশুর হাট রয়েছে।
সারা দেশে সম্ভাব্য যানজটের ১৫৫টি স্পট চিহ্নিত করা হয় সভায়। এসব স্থান ঈদের আগে-পরে নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সভায় আরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে পণ্য ও পশুবাহী যানবাহনে, বিশেষ করে ফিরতি পশুবাহী ট্রাকে যাতে যাত্রী বহন করা না হয়।
সড়কে শৃঙ্খলা রাখার লক্ষ্যে কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে কোন হাটে পশু যাবে, সে বিষয়ে ট্রাকের সামনে ব্যানার ব্যবহার করা।

টোল প্লাজায় পশুবাহী যানবাহন পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া। সওজের আওতাধীন ৯টি সেতু ও ২টি মহাসড়কে ইটিসি বুথ চালুর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক টোল আদায় অব্যাহত রাখা। এগুলো হলো কর্ণফুলী সেতু, মেঘনা সেতু, গোমতী সেতু, পায়রা সেতু, খান জাহান আলী (রূপসা) সেতু, চরসিন্দুর সেতু, শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু, আত্রাই টোল প্লাজা, লালন শাহ সেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক। পাশাপাশি সেতু বিভাগের আওতাধীন পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও কর্ণফুলী টানেলে ইটিসি বুথ সার্বক্ষণিক চালু রাখা।

যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নিরাপদ-নির্বিঘ্ন করতে সড়কপথে গুরুতর দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ৯৯৯ নম্বরের সহায়তায় সড়ক-মহাসড়কসংলগ্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাসহ অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা রাখা।

বিআরটিএর সদর কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, বিআরটিসি, সওজ অধিদপ্তরের কর্মচারীদের সমন্বয়ে ঈদের আগে-পরে মোট সাত দিনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা।

সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।