২৪ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সর্বোচ্চ আদালতের রায় লঙ্ঘন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বইটির লেখক সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন (ডান থেকে পঞ্চম) ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অতিথিরা। ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর
ছবি: আশরাফুল আলম

সরকার চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আইন লঙ্ঘন করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। জনগণের চাওয়া এবং আদালতের রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ সোমবার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সাবেক বিচারপতি, আইন বিশেষজ্ঞ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সর্বোচ্চ আদালতের রায় লঙ্ঘন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি লিখেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, এই সরকার জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতায় আছে। নতুন কায়দায় একদলীয় শাসনের জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নেমেছে। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। এক দফা দাবির কোনো বিকল্প নেই।

দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বলে মন্তব্য করেন সাবেক বিচারপতি মীর হাসমত আলী। তিনি অভিযোগ করেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে এখন লাঠিতন্ত্র চলছে।

সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, উন্মুক্ত আদালতে দেওয়া রায় তা পরিবর্তন করা অপরাধ। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি উন্মুক্ত আদালতে বলেছিলেন, অন্তত দুটি মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অনুযায়ী নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু এই রায়ের সঙ্গে লিখিত রায়ের মিল নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে হওয়া আদালতের রায়, সংবিধানের সংশোধনীর পূর্বাপরের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অনেকেই বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে। আমরাও বলছি, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা কোনো ব্যাপারই না। সংসদ অধিবেশন দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কারণ, এটি জনগণের চাওয়া, আদালতেরও এটি চাওয়া।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে পরামর্শ নিতে আটজন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করলেন। তাঁদের মধ্যে সাতজন বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখা উচিত। ১৬ মাস পর ফরমায়েশি রায় লেখা হলো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এটি প্রমাণিত সত্য। দেশের মানুষ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, জনগণের সরকার চায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের দলীয় সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

বইয়ের লেখক জয়নুল আবেদীন তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, এটি গতানুগতিক বই নয়, তথ্যভিত্তিক আইনগত পর্যালোচনা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করার সাংবিধানিক ও আইনগত ব্যাখ্যা। উন্মুক্ত আদালতে দেওয়া রায় বলবৎ থাকা অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগেই সরকার তড়িঘড়ি করে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে, যা আদালতের রায় অনুযায়ী হয়নি এবং রায়ের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাঁর দাবি, অবসর নেওয়ার ১৬ মাস পরে বিচারকের লেখা রায় আইনের চোখে রায় হিসেবে গণ্য হয় না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, গণ অধিকার পরিষদের (নুরুল-রাশেদ) সভাপতি নুরুল হক প্রমুখ।