মন্ত্রী–এমপিদের স্বজনেরা এবারও সরলেন না

  • দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীর স্বজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

  • সংসদ সদস্যদের সন্তান, ভাই, শ্যালকেরাও প্রার্থী।

  • ১৫৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৬৬ জন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দফায় দফায় নির্দেশ, হুঁশিয়ারি—কোনো কিছুতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের থামানো যাচ্ছে না। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনেও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের নিকটাত্মীয় ও স্বজনেরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় পর্বের ভোটের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ভোট হবে ২১ মে। এই পর্বে ১৫৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৬৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী হয়েছে খুলনা বিভাগে। এই বিভাগে ৮৩ জন। এর পরেই রংপুর বিভাগে প্রার্থী ৬৮ জন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৬৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৪ জন, ঢাকা বিভাগে ৬২ জন,বরিশাল বিভাগে ৫১ জন, ময়মনিসংহ বিভাগে ৪০ জন ও সিলেট বিভাগে ৩৪ জন। দ্বিতীয় পর্বেও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

এর বাইরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১৭ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আটজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন।

এদিকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বারবার নির্দেশ দেওয়ার পরও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবনে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বজনদের যাঁরা ভোটের মাঠে নেমেছেন, তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রথম ধাপে শুধু নাটোরের একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠায় ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন লুৎফুল হাবিব। তিনি তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের শ্যালক।

এ ছাড়া স্বজনদের আর কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। উপজেলার প্রথম দফার ভোটের জন্য আওয়ামী লীগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের ৫০ জনের মতো স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। আর গতকাল দ্বিতীয় পর্বের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের স্বজনেরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। দলের সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ অমান্য করে স্বজনদের যাঁরা ভোটে থাকছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের নেতৃত্বের ওপর চাপ তৈরি হয়। ভিন্নমতও রয়েছে দলটিতে।

৩ মন্ত্রীর নিকটাত্মীয়

দ্বিতীয় পর্বের ভোটে দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীর স্বজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে থাকা এই স্বজনদের মধ্যে রয়েছেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা নজরুল মজিদ মাহমুদ চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সেখানকার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হাকিম। তিনি রেলমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের (পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী) সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিমের আপন চাচাতো ভাই।

গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই জামিল হাসান (দুর্জয়) চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

সন্তান, ভাই, শ্যালক প্রার্থী

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ (জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) এবং ছোট ভাই ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ (জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি) প্রার্থী হয়েছেন। এ বিষয়ে নুরুজ্জামান আহমেদের ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তাঁর ভাইয়ের বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। তবে সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করলে তিনি বিষয়বস্তু জানার পর ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের ভাই গোলাম সারওয়ার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায়।

সংসদ সদস্যদের স্বজনদের মধ্যে আরও আছেন জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের ভাই মো. নজরুল ইসলাম, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের শ্যালক আক্তারুজ্জামান, পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পাবনা-২ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. মকবুল হোসেনের বড় ছেলে গোলাম হাসনায়েন, চুয়াডাঙ্গা সদরে সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ভাতিজা নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার। তাঁরা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।

এ ছাড়া বগুড়া-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদীর বাবা সিরাজুল ইসলাম খান চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরীর ভগ্নিপতি মামুনুর রশিদ (রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ছেলে সাইফুল আলম ওরফে দিপু হয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী।

দ্বিতীয় ধাপে এখন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২ মে। সব মিলিয়ে ৪৮০টির মতো উপজেলায় চার ধাপে নির্বাচন হবে। ৮ মে প্রথম পর্বে ১৫০টি উপজেলার ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন শুরু হচ্ছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]