বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরে দলীয় ব্যক্তিদের বসানো হয়েছে—এমন অভিযোগ এসেছে বিএনপি সমর্থক সাবেক আমলাদের একটি সংগঠনের সেমিনারে।
এ সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দমতো সাজানো শুরু করেছে সরকার। এ ধরনের প্রশাসন রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে পলিসি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটি (পিএমআরএস) আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলা হয়। বিএনপি সমর্থক সাবেক আমলাদের এই সংগঠন ‘সর্বব্যাপী দলীয়করণ ও সাজানো প্রশাসন: অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্তরায়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব এ এস এম আবদুল হালিম। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকেই ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে প্রশাসনকে স্থায়ীভাবে দলীকরণ করে সাজাতে শুরু করে। দলীয় ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো, দ্রুত পদোন্নতি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ নানা সুবিধা দিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রবন্ধে বলা হয়, এই প্রশাসনের সচিবেরা এখন এলাকায় গিয়ে দলীয় প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছেন। পুলিশের অত্যুৎসাহী কর্মকর্তারা তাঁদের পুরোনো চেহারায় ফিরে আসছেন। গায়েবি ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে অভিযান ও গ্রেপ্তার চালাচ্ছেন। আজ্ঞাবহ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন সাজানো হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দলটির সমর্থক সাবেক আমলাদের সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে স্কুল কমিটিতেও দলীয় লোক বসানো হয়েছে। ফলে স্কুলশিক্ষকেরাও বাধ্য থাকেন, তাঁদের কথা অনুযায়ী চলতে। অর্থাৎ তাঁরা কেন্দ্রে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে সেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগই নেই। এই সাজানো প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। নিরপেক্ষ সরকার এলেও কতটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তারও সংশয় থাকে। তবে প্রশাসনের অনেক ভালো মানুষ রয়েছেন, যাঁরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্যায় করে যাচ্ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার বলেন, এ সরকারকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে প্রশাসন, যাদের তৈরি করেছে এ সরকার। মানুষের কাছে সরকার বলতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু এরাই সরকারকে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাবেক সচিব আবদুর রশিদ সরকার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ইফতেখার আহমেদ, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা সাঈদ হাসান, নাজমুল করিম খান প্রমুখ।