সংকট নিরসনে সংঘাত নয়, সংলাপ প্রয়োজন: জাপা
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান এবং এক দফা ঘোষণাকে জাতির জন্য ‘অশনিসংকেত’ বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। তাঁরা বলেন, বড় দুই রাজনৈতিক দলেরই লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া, জনগণকে নিয়ে তাদের চিন্তা নেই। চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে সংঘাত নয়, সংলাপ প্রয়োজন। সংলাপের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তাঁরা।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় জাতীয় পার্টির নেতারা এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মরণে এই সভার আয়োজন করে জাতীয় পার্টি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ‘দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের অধীনে আমরাও নির্বাচন চাই। কিন্তু পুরো নির্বাচনব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছিলেন, চিরস্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দরকার। এখন সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন।’
জি এম কাদের বলেন, সারা দেশের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে আওয়ামী লীগ করে কি না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেছে বেছে নিজেদের লোক বসানো হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য, ব্যাংক লুট নিয়ে কথা বলছে না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারা কীভাবে ক্ষমতায় যাবে ও থাকবে, সেই কথা বলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না, সংলাপ চাই। গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। সরকারকে সংলাপের ব্যবস্থা করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির আরেক কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে ছাড়া নির্বাচন হবে না। বিএনপি বলছে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেবে না। দুই দলের এক দফা, জাতির জন্য অশনিসংকেত।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা দৌড়ঝাঁপ করছেন, হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। এমন নাজুক অবস্থা দেশে আর কখনই হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, গণতন্ত্রের সংজ্ঞাই পাল্টে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন বলছে, আমরা আমাদের মতো নির্বাচন করব, কেউ আসুক বা না আসুক, এটাই গণতন্ত্র।’
জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, যারা দেশকে শান্তি দিতে পারবে, জনগণ তাদের দিকে তাকিয়ে। জনগণকে জিম্মি করে আর ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না।
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, রাজনীতি কৌশলের খেলা। সামনে এই কৌশলের খেলা শুরু হবে। জাতীয় পার্টিকে ভেবেচিন্তে দাবার ঘুঁটি চালতে হবে, তাহলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়ার মধ্য দিয়ে স্মরণসভা শুরু হয়। সভায় দলের নেতারা বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ঘোচাতে কাজ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে নষ্ট করেননি। প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করেছিলেন।
জাপার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের প্রমুখ।