কেউ যাতে কিছু লিখতে না পারে, সে জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: ফখরুল

মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের র‍্যালিতে অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা
ছবি : প্রথম আলো

কেউ যাতে কিছু লিখতে না পারে, সে জন্যই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই আইনে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে এসব অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। মহান মে দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা আড়াইটায়। কিন্তু এরও প্রায় দুই ঘণ্টা আগে থেকে রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের দিকে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে বেলা একটা থেকে সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। ভয় দেখিয়ে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সর্বোচ্চ আদালতকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এই সরকার শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী সরকার বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরোনো কায়দায় আরেকটি নির্বাচন করতে চায় বলেও অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে ভোট দিতে না পারেন, ভোট চুরি করে যেন ক্ষমতায় আসতে পারে এবং আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে, সে জন্য এখন থেকেই হুমকি দিয়ে জনগণকে ভয় দেখাতে চায় সরকার।

অগ্নি-সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল তিনি বলেন, ‘অগ্নি-সন্ত্রাস তো করেন আপনারা। আপনারা বাসে আগুন লাগিয়ে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন মন্ত্রী বলছেন, এটাকে নিয়েও নাকি আমরা রাজনীতি করছি। ধিক্কার দিই তাঁদের, যাঁরা একজন অসুস্থ নেত্রীকে নিয়ে এ ধরনের কথা বলতে পারেন। তাঁকে আপনারা চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না। দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না। মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে তাঁকে আটক করে রেখেছেন।’

সমাবেশে পুলিশের আইজিপির দেওয়া একটি বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘পুলিশের আইজিপি বলছেন, নির্বাচনের আগে কোনো গোলযোগ বরদাশত করা হবে না। গোলযোগ কোথায় দেখছেন? গোলযোগ তো সৃষ্টি করছেন আপনারা। আজ খুলনায় শ্রমিক দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে পণ্ড করে দিয়েছেন। সেখান থেকে শ্রমিক দলের সেক্রেটারিকে গ্রেপ্তার করেছেন।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, মনে রাখতে হবে, এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে কী থাকবে না। মানুষ মুক্ত হবে কী হবে না। এবারের লড়াই স্বাধীনতার লড়াই, মুক্তির লড়াই, খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসার লড়াই। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার লড়াই। শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াই।

গরিব আরও গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্তরাও গরিব হচ্ছে উল্লেখ করে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। কারণ, লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যাঁরা সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা ঘরে থাকতে পারছেন না বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, এক মাঘে শীত যায় না, কথাটি মনে রাখতে হবে।

ক্ষমতায় যেতে বিএনপি জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে আর আওয়ামী লীগ বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে—এমন মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সাহস থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ না হলে বর্তমান সরকারকে বিদায় করা যাবে না। তাই দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সরকার শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করেনি, বলেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান।

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান ও বরকতউল্লা, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। নেতা-কর্মীদের অনেকে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, শান্তিনগর ঘুরে মালিবাগ হয়ে মৌচাক মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।