সমঝোতা ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার দাবি বাম জোটের

বাম গণতান্ত্রিক জোট
ছবি: সংগৃহীত

সংঘাত-সংঘর্ষের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। নির্দলীয় তদারকি সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য সরকার ও সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি সমঝোতা ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করারও দাবি জানানো হয়েছে।

রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আজ বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার জনমত ও বিরোধী দলগুলোর দাবি উপেক্ষা করে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যা নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ৫২ বছরেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থা শাসকশ্রেণি গড়ে তুলতে পারেনি। তাই প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমবেশি সংঘাত-সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। নির্বাচন নিয়ে যে সংকট ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা নিরসনের উদ্যোগ সরকার নেয়নি। সরকার গ্রেপ্তার ও দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, যা দেশকে আরও গভীর সংকটে নিক্ষেপ করবে।

শাসকশ্রেণি ক্ষমতায় থাকতে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, শাসকশ্রেণি ক্ষমতায় থাকতে একদিকে সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু থাকছে, অপর দিকে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। অনুমতি পাওয়ার পরও ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়েছে, অন্যদিকে অনুমতি না দিলেও জামায়াতকে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করতে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হামলা, মামলা, গণগ্রেপ্তার বন্ধ করে বিরোধী নেতাদের মুক্তি দিয়ে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তাতে বলা হয়, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করার অর্থ হবে রাজনৈতিক সহিংসতা জিইয়ে রাখা। এতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিবেশ ও সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে সংঘাত ও সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে সেদিন বাম জোটের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন থেকে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালনের জন্য জোটের নেতা-কর্মী ও গণতন্ত্রকামী জনগণকে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ১০ নভেম্বর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ, বাসদের (মার্ক্সবাদ) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন, আমিনুল হুদা টিটো দিবসে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেদিন ঢাকায় সকাল ৯টায় নূর হেসেন স্কয়ারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সকাল ১০টায় পল্টন মোড়ে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।