বুয়েটে শোক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান শেষে তোপের মুখে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের একাংশ।

এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা ‘এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না’ বলে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা শুধু বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করতে এসেছিলাম।’ তখন শিক্ষার্থীরা   তাঁদের উদ্দেশে ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘খুনি’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা চলে যান৷

শনিবার বিকেলে বুয়েট মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে ওই আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

কিন্তু বুয়েট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের কথা বলে এই অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, আবেদনে কোনো সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিটির কথা জানতে পারেন শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। পরে তাঁরা বুয়েট মিলনায়তনের সামনে জড়ো হতে থাকেন৷ বাইরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করলেও বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল৷ অনুষ্ঠান শেষে রাত সোয়া আটটার দিকে বেরিয়ে আসার পর বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা৷

এ সময় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে আজহার নামের এক ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়৷ আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করতে এসেছিলাম।’ তখন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলতে থাকেন, ‘ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন’, ‘সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাই আবরারকে হত্যা করেছে’, ‘শোক দিবসের কর্মসূচি করবে বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীরা’৷

আজহারের সঙ্গে থাকা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে গেলে তাঁরাও তোপের মুখে পড়েন৷ একপর্যায়ে তাঁরা চলে যান৷

বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা চলে যাওয়ার পর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বুয়েট মিলনায়তনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা৷ সেখানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে গড়ে তুলতে৷ এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ ও সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করা সব শিক্ষার্থীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম৷ অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে ছাত্ররাজনীতি একসময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিল, পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের, সেই ছাত্ররাজনীতি আজ ক্ষমতার অপব্যবহারে কলুষিত৷ বুয়েট ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে নিরীহ শিক্ষার্থীদের বারবার প্রাণ ঝরেছে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনগুলোর অপকর্মে৷ সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নৃশংস অত্যাচারে আবরার ফাহাদ নিহত হন৷ এর প্রতিবাদে বুয়েটের সব সাধারণ শিক্ষার্থীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১১ অক্টোবর বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়৷’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও আজ সেমিনার হল, বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতৃবৃন্দের’ আয়োজনে একটি ব্যানার দেখা যায়৷ এর আগে গত ২ জুলাই বুয়েটের কাজী নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দিপের স্মৃতিফলকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ৮ জুন সাবেকুন নাহার সনির স্মৃতিফলকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যানার টাঙানো হয়৷ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বুয়েট প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ার মধ্য দিয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে৷ এমন কার্যক্রমের ব্যাপারে বুয়েটের সব সাধারণ শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুস্পষ্ট জবাব আশা করছে৷

জানতে চাইলে বুয়েটে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি হবে, তা তাঁর জানা ছিল না৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের কথা বলে অনুষ্ঠানটির অনুমতি নেওয়া হয়েছিল৷ তাঁরা কোনো সংগঠনের নাম উল্লেখ করেননি৷ বিকেলে শিক্ষার্থীরা আমাকে জানালেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের ব্যানারে একটি কর্মসূচি হচ্ছে৷ পরে অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি জানাই যে তাঁদের অনুষ্ঠানের ব্যানার নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে৷ তখন তাঁরা ব্যানারটি সরিয়ে ফেলেছেন৷’
পরে প্রথম আলোকে ওই অনুষ্ঠানের অনুমতিপত্রটি পাঠান মিজানুর রহমান৷ এতে তাঁর বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়৷