বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন না বহিষ্কৃতরা

ব্যালট বাক্সপ্রতীকী ছবি

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বহিষ্কৃত নেতারা ভোটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের খুব একটা পাশে পাচ্ছেন না। এসব প্রার্থী নিজেদের আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে কোথাও কোথাও তাঁরা স্থানীয় বিএনপির একটি অংশকে পাশে পাচ্ছেন।

চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আজ বুধবার ১৩৯টি উপজেলায় ভোট হবে। এ নির্বাচনে বিএনপির ৭৫ জন নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হওয়ায় তাঁদের ইতিমধ্যে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতদের মধ্যে তিনজন কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বিএনপির তিন নেতা মো. ইমান আলী, সেকান্দার আলী ও তাজমিন নাহার। ইমান আলী রৌমারী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপির সহসভাপতি। এবারও তিনি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। আর উপজেলা বিএনপির সদস্য সেকান্দার আলী ও মহিলা দলের সহসভাপতি তাজমিন নাহার ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির কাউকে সেভাবে অংশ নিতে দেখা যায়নি। নিজেদের আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে তাঁরা প্রচার চালান।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাঁরা দলের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। বহিষ্কারের পর বিএনপির সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই নির্বাচনে সহযোগিতা করার প্রশ্নই আসে না।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতাদের বহিষ্কারের পরও অনেক উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্বাচন নিয়ে বিভক্ত বা দোটানায় রয়েছেন। এর একটি পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলা। সেখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল কবির তালুকদার।

এই উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বেশি বলে মনে করা হয়। ২০০৯ সালে এই উপজেলার প্রথম নির্বাচনে ফায়জুল কবিরের ভাই ইকরামুল কবির তালুকদার চেয়ারম্যান হন। ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান হন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। ২০১৯ সালে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন বর্জন করলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম মতিউর রহমান চেয়ারম্যান হন। এবারও তিনি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। দলের আরও দুজন নেতা জিয়াউল আহসান গাজী ও শেখ আবুল কালাম আজাদও প্রার্থী হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীর বিপরীতে ভোটের হিসাব-নিকাশে ফায়জুল কবির অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। তবে এটি নির্ভর করবে সুষ্ঠু ভোট এবং কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের উপস্থিতির ওপর। যদিও এরই মধ্যে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে ফায়জুল কবির বিপাকেই পড়েছেন।

এ বিষয়ে ইন্দুরকানি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ফায়জুল কবির তালুকদার দীর্ঘদিন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকায় দলের সমর্থক সাধারণ ভোটাররা তাঁকে বিএনপির লোক মনে করেন। সে জন্য হয়তো কেউ কেউ তাঁকে ভোট দেবেন।

বহিষ্কারের পরও বিএনপির নেতারা নির্বাচন থেকে সরছেন না। এর অন্যতম কারণ, এবারের উপজেলা নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীক না থাকা, একই সঙ্গে এক উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দেখা গেছে, যেসব উপজেলায় বিএনপির নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, তার সব কটিতেই আওয়ামী লীগদলীয় একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে জয়ের জন্য তাঁরা এ দুটিকেই সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার দুটিতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সাত প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির (বহিষ্কৃত) দুই নেতা। দিরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আজাদুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায় ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রিপা সিনহা প্রার্থী। তাঁদের সঙ্গে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মো. গোলাপ মিয়া।

শাল্লা উপজেলায় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অবনি মোহন দাস, যুবলীগের নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস, আওয়ামী লীগের সমর্থক এস এম শামীম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার। তিনিও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গনেন্দ্র চন্দ্র দাসের প্রতি বিএনপি নেতা-কর্মীদের সমর্থন আছে। তবে প্রকাশ্যে কেউ মাঠে নেই।

শাল্লা সদরের বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এবার দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে না। তাই ভোটাররা দলের চেয়ে ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।

জানা গেছে, দলীয় শাস্তির ভয়ে অনেক উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকে ভোটের মাঠে বহিষ্কৃত নেতার পক্ষে ভেতরে–ভেতরে কাজ করছেন।

যদিও উপজেলা নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে বিএনপি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও রাজধানীর বনানী এলাকায় ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগামীকালসহ চার দফায় যে উপজেলা নির্বাচন হবে সেই নির্বাচন জনগণ বর্জন করবে। এই ভোট হচ্ছে প্রহসনের ভোট।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা]