বাস, লঞ্চ, ট্রেন ভরে ঢাকায় নেতা-কর্মীরা, রাতেই ভিড় সংবর্ধনাস্থলে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে গণসংবর্ধনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা–কর্মীরা জড়ো হয়েছেন গণসংবর্ধনাস্থলে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে ৩০০ ফুট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গণসংবর্ধনায় যোগ দিতে কয়েক দিন ধরে ঢাকায় আসছেন দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা। সংবর্ধনার আগের দিন গতকাল বুধবার বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহন ভরে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকায় আসেন।

রাজধানীর পূর্বাচলে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে (৩০০ ফুট সড়ক) তারেক রহমানকে আজ বৃহস্পতিবার গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে। সেখানে তিন দিন ধরে চলছে মঞ্চ তৈরি ও অন্যান্য প্রস্তুতির কাজ। নেতা-কর্মীরা কয়েক দিন ধরেই সেখানে যাচ্ছেন। গতকাল সারা দিন ও রাতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সেখানে ভিড় করেন।

রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে বিপুল উপস্থিতি ছিল। অনেকেই বলছিলেন, তাঁরা রাতে সেখানেই অবস্থান করবেন।

তারেক রহমান আজ দুপুর ১২টার দিকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবেন। তিনি ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন। দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের ফেরা দেশ ও দলের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তারেক রহমানের তিন দিনের কর্মসূচির কথা জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গণসংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আজ দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। অন্য কেউ বক্তব্য দেবেন না।

বিএনপি বলছে, জনদুর্ভোগ এড়াতে তারেক রহমান ছুটির দিনে দেশে ফিরছেন এবং গণসংবর্ধনার স্থল হিসেবে পূর্বাচলকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

গণসংবর্ধনাস্থলে প্রস্তুতি

গতকাল দিনভর ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর কুড়িল থেকে সংবর্ধনাস্থলে যাওয়ার পথে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। আর কুড়িল মোড় থেকে বেশ খানিকটা দূরে সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৬ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ। গণসংবর্ধনার সময় মঞ্চে তারেক রহমানের সঙ্গে থাকবেন বিএনপির ২৫ জন জ্যেষ্ঠ নেতা।

গণসংবর্ধনাস্থলে নিরাপত্তার কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে দেখা গেছে। মঞ্চের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান করছে। বিএনপির চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরাও নিজেদের মতো করে নিরাপত্তায় কাজ করছেন।

মঞ্চের দুই পাশের সড়কের সড়কবাতির খুঁটিতে স্থাপন করা হয়েছে মাইক। মঞ্চ থেকে একটু পরপর বসানো হয়েছে ইলেকট্রনিক পর্দা (এলইডি স্ক্রিন)। তাতে মূল মঞ্চ ও পুরো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। গণসংবর্ধনাস্থলে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ছয় শয্যার একটি অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র। রাখা হয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

গণসংবর্ধনাস্থলে গতকাল বেলা একটার দিকে দেখা যায়, নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সেখানে যাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ফেসবুক ‘লাইভ’ করছেন, আবার কেউবা ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে এবার বাংলাদেশে’—এমন স্লোগান দিচ্ছেন।

মঞ্চের সামনে পাওয়া যায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ছাত্রদলের সহসভাপতি ফেরদৌস নাভিদকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগামী দিনগুলোয় তারেক রহমানের নেতৃত্বে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন, যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানুষের ভোটের অধিকার ও জনগণের শাসন। সবাই আশা নিয়ে তারেক রহমানের অপেক্ষায় আছেন।

জেলা থেকে দলে দলে ঢাকায়

তারেক রহমানের গণসংবর্ধনায় মানুষের বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গণসংবর্ধনাকে ঘিরে বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহন ভরে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা।

তারেক রহমানের নিজের জেলা বগুড়ার নেতারা বলছেন, বিগত তিন দিনে সেখান থেকে ৭০০ গাড়িতে করে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এর বাইরে বগুড়া থেকে ট্রেনে ঢাকায় এসেছেন অন্তত ১০ হাজার নেতা-কর্মী।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঝালকাঠি জেলা থেকে প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মী, বাগেরহাটের প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মী এবং যশোর থেকে প্রায় ৫০ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় এসেছেন। এভাবে সব জেলা থেকেই বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী আসছেন।

বিশেষ ট্রেন

তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে মানুষের আসার সুযোগ করতে ১০টি পথে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে রেলওয়ে। বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে ভাড়ার বিনিময়ে আজ এসব ট্রেন চালাবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে ১১টি বিশেষ ট্রেন চালুর আবেদন করা হয়েছিল। ইঞ্জিন-সংকটের কারণে শেষ পর্যন্ত ১০টি ট্রেন চালু করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য ট্রেনে ১৭টি বাড়তি কোচ যুক্ত করা হয়েছে।