খালেদা জিয়ার খাবারে সরকার কিছু মিশিয়েছিল কি না, সন্দেহ রিজভীর
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ছিলেন, তখন তাঁর খাবারে সরকার কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য দোয়া মাহফিলে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা বিএনপি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘অনেকেরই সন্দেহ হয়, যে মহিলা (খালেদা জিয়া) স্বাভাবিকভাবে জেলখানায় গেলেন, তিনি আজকে গুরুতর অসুস্থ কেন? এগুলো তো বিরাট সন্দেহের সৃষ্টি করে। সরকার কারাগারে তাঁর খাওয়ার মধ্যে কোনো কিছু মিশিয়েছে কি না, এটা নিয়ে জনগণ আজকে সন্দেহ পোষণ করে।’
প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, ওনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র কিসের? আপনাকে ক্ষমতায় রাখা এবং সরানোর দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের। আপনিই তো জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, জনগণ যাতে সুষ্ঠু ভোটে অংশগ্রহণ করতে না পারে। এই জন্য নিশিরাতে ভোট করছেন, একতরফা নির্বাচন করছেন, এখনো কত ষড়যন্ত্র করছেন। আপনাকে সরিয়ে দেওয়ার বৈধ অধিকার যার, সেই জনগণকে আপনি বন্দী করে রেখেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘আপনি ক্ষমতায় থাকবেন, আর সেই জনগণকে ষড়যন্ত্রের কথা বললে জনগণের অট্টহাসি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না। আপনি ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী। আপনি সুষ্ঠু ভোট কবরে নিয়ে গেছেন। আপনার বিরুদ্ধে জনগণের উত্থান অবশ্যম্ভাবী।’
খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের উল্লেখ করে রিজভী বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর ভালোবাসার জন্যই তিনি টার্গেট হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে অধীন রাখতে চায়, নতজানু করতে চায়, তারা কেন খালেদা জিয়াকে সহ্য করবে। এ জন্য তাদের প্রতিনিধি দিয়ে ষড়যন্ত্রের নির্বাচন করে, স্বৈরশাসনের মাধ্যমে, আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি মিথ্যা মামলার রায় দিয়ে, তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁর মুক্তির জন্য আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি। আজকে জীবনযন্ত্রণায় ভুগছেন খালেদা জিয়া।’
জিনজিরায় দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন মাস্টার, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু প্রমুখ।
গত ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৫ আগস্ট ছিল তাঁর ৭৮তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে গতকাল তাঁর সুস্থতা কামনায় সারা দেশে দোয়া মাহফিল করে বিএনপি। তাঁর উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আজ সারা দেশে প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি রয়েছে।
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন
১৪ আগস্ট রাতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আকস্মিক মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘ঠিক যেমন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার, ইসলামি চিন্তাবিদ ও ভাষ্যকার, তাঁর মৃত্যু নিয়েও কিন্তু একটা রহস্য দানা বেঁধেছে। কেন ১৫ আগস্টের প্রাক্কালে তিনি মারা গেলেন হার্ট অ্যাটাকে। এটা নিয়েও অনেকের সন্দেহ, যে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব সুস্থ মানুষটা হঠাৎ করে মারা গেলেন কেন।’
রিজভী যোগ করেন, ‘যে ব্যক্তিরা, যে ডাক্তাররা তাঁর (সাঈদী) ফাঁসির জন্য স্লোগান দিয়েছে, তাঁদেরই নিয়োজিত রাখা হয়েছিল তাঁর চিকিৎসার জন্য। এটা কি সন্দেহের উদ্রেক করবে না, রহস্যের উদ্রেক করবে না?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত, আমরা আতঙ্কিত, জাতির গণতন্ত্রের প্রতীক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক, তাঁকে (খালেদা জিয়া) তো সহ্য করবে না। অনেক বিদেশি প্রভু, তারাও করবে না। আর তাদের প্রতিভূ শেখ হাসিনাও করবেন না।’