দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত যাচাইয়ে দুই মাস পিছিয়ে ইসি

নির্বাচন কমিশন

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে চলছে কি না, তা যাচাই করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এই কাজের জন্য নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় দেওয়া সময়সীমা থেকে দুই মাস পিছিয়ে পড়েছে ইসি।

তথ্য সংগ্রহে কিছুটা দেরি হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দলগুলোর অবস্থা খতিয়ে দেখে নিবন্ধন বহাল রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

ইসির  কর্মপরিকল্পনায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন–সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। তাতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এটি করার কথা বলা হয় কর্মপরিকল্পনা।

সম্প্রতি ইসি সূত্র জানায়, এখনো দলগুলোর তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়নি। ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত ১৩ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে (২৪ নভেম্বর) মধ্যে এসব তথ্য দিতে বলা হয়েছে। কোনো দল আবেদন করলে এই সময় আরও বাড়ানো হতে পারে। দলগুলো থেকে তথ্য পাওয়ার পর সেগুলো খতিয়ে দেখবে ইসি। কোনো দল শর্ত পালন করছে না—এমনটা প্রমাণিত হলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

বর্তমান কমিশন তাদের কর্মপরিকল্পনায় বলেছে, আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে দলগুলো থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন বহাল-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলছে ইসি

২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম আইনে যুক্ত করা হয়। কোনো দল ইসিতে নিবন্ধিত না হলে দলীয়ভাবে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এই নিবন্ধন পেতে আইনে নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হয়। আবার নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্ধারিত কিছু শর্ত পালন করার বিধান আছে। এগুলো না মানলে ইসি ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারে।

নির্বাচন কমিশন মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন করছে কি না, সে সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর কমিশন সেগুলো যাচাই করে দেখবে। যাচাই করার মতো সক্ষমতা ইসির আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসির সে সামর্থ্য একেবারে নেই তা নয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিশনের কর্মকর্তা আছেন। তাদের মাধ্যমে এগুলো খতিয়ে দেখা হবে।  

ইসির কর্মপরিকল্পনায় বলা আছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইসি এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করবে। কিন্তু সেটি করা যায়নি। কর্মপরিকল্পনা থেকে ইসি পিছিয়ে পড়ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ইসির কর্ম পরিকল্পনায় বলা হয়েছে তথ্য পর্যালোচনা করে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বহাল–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সে সময়ের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

নিবন্ধনের জন্য শর্ত

তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করলে কোনো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। সেগুলো হলো ১. বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসনে জয়।

২. যেকোনো একটি আসনে দলীয় প্রার্থী মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া ৩. কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় এবং প্রত্যেকটিতে সদস্য হিসেবে অন্তত ২০০ জন ভোটারের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে।

ইসি সূত্র জানায়, এখন নিবন্ধিত দলগুলো এই শর্ত পূরণ করছে কি না, সে সম্পর্কিত তথ্য তাদের কাছে চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরে নারী প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখা, বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না—এসব বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এর আগে কে এম নূরুল হুদা কমিশনও দলগুলো শর্ত পালন করছে কি না, তা যাচাই করেছিল। শর্ত মেনে না চলায় গত জাতীয় আগে ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি এবং ২০২১ সালে জাগপার নিবন্ধন বাতিল করেছিল।

আর ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছিল আদালত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।