পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে: জি এম কাদের

জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জি এম কাদের বক্তব্য দেন
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দায় সরকার এড়াতে পারে না।

আজ শনিবার দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জি এম কাদের এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’ তা-ই করার অনুরোধ করেছেন।

জি এম কাদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারতকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে।

গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা উঠলে সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে হাস্যকর হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে সারা বিশ্বের কাছে আমরা মিথ্যাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হচ্ছি।’

জি এম কাদের বলেন, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। আবার প্রতিনিধি পছন্দ না হলে ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন করার অধিকার চান। প্রজাতন্ত্র মানে দেশের মালিকানা সাধারণ মানুষের। দেশের মালিকানা সাধারণ মানুষের না থাকলে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে কখনোই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিবছর দেশ থেকে লাখো-কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। জবাবদিহির অভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। কেউ দুর্নীতির সমালোচনা করলে সরকার তাকে ষড়যন্ত্রকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী মনে করে। সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাইলে সমালোচনা শুনতে হবে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এ বছর সরকারকে ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা। আগামী এক-দুই বছরে ঋণের আসলসহ সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়তে পারে দেশ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, তখন শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে পারে দেশ। তিনি বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সব পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প তৈরি করছে, কিন্তু মানুষ বাঁচাতে কোনো উদ্যোগ নেই। মানুষ যদি খেয়েপরে বেঁচে থাকতে না পারে, তাহলে মেগা প্রকল্পের সুবিধা কে ভোগ করবে? তিনি হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জি এম কাদের আরও বলেন, হিন্দু শাস্ত্রমতে শিষ্টের লালন আর দুষ্টের দমনের জন্যই শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। কিন্তু এখন দেশে চলছে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন। তিনি বলেন, এখন শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন না, এখন মুসলিমরাও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। এখন সৎ মানুষ হলে চাকরি মেলে না, আদর্শবান হলে ব্যবসা করতে পারছেন না। বেঁচে থাকার তাগিদেই এখন দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাচ্ছেন সবাই।

জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় পার্টি সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। ভোটের রাজনীতির জন্য কিছু রাজনৈতিক দল উসকানি দেয়, আবার ধর্মীয় গোঁড়ামি আর ব্যক্তি স্বার্থেও কখনো কখনো বিচ্ছিন্নভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

অনুষ্ঠানে জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের, সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের মধ্যে নিম চন্দ্র ভৌমিক, সুব্রত চৌধুরী, জে এল ভৌমিক, গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, নকুল চন্দ্র সাহা, সুমন কুমার রায়, দ্বীজমনি গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, জাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন দে, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক শংকর পাল বক্তব্য দেন।