জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বেদনাতুর ১৯৭৫ আগস্টের শহিদদের আলেখ্য’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
ছবি: বাসস

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর ভর করেছে, তাঁর ইস্যুতে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এভাবে আশ্রয় নিয়ে যারা খুনের রাজনীতি করে, মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি করে, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে, খুনের ওপরে যাদের জন্ম, রক্তের ওপরে যাদের রাজনীতি, তাদের দিয়ে দেশের অগ্রগতি হয় না।’

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেবউননেছার গবেষণাগ্রন্থ ‘বেদনাতুর ১৯৭৫ আগস্টের শহিদদের আলেখ্য’র মোড়ক উন্মোচনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, নোবেল বিজয়ী হোন, রাষ্ট্রপতি হোন, প্রধানমন্ত্রী হোন—কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যেভাবেই হোক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁর বিচার হয়েছে, তিনি জেলও খেটেছেন। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া, তিনিও শাস্তি ভোগ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার হচ্ছে। বহু নোবেলজয়ীর বিচার হয়েছে, জেলখানাতেও গেছে। আর ড. ইউনূস সাহেব নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলে তাঁর কি শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া মওকুফ!’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ জাতির দুর্ভাগ্য যে যারা রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল, তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে এবং দেশে কিছু ভোটও পায়। ১৯৭০ সালেও আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কিছু ভোট পড়েছিল। তাদের প্রজন্ম তো রয়ে গেছে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সব স্বাধীনতাবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের একত্র করে দল গঠন করেছিলেন। আজকে সেই দল বড় বড় কথা বলে, রাত-বিরাতে বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দেয়। কিন্তু ধরনায় লাভ হয়নি। কারণ, কেউ তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার সমর্থন করেনি।’

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১০ তারিখে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ আসছেন। আবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছুটে আসছেন আগামীকাল। এতেই প্রমাণিত হয়, বিশ্বসম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে আছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৯ তারিখে ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুধু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে শিল্পায়নে বিশ্বের শীর্ষ–২০ দেশের বর্তমান চেয়ার ভারত। এ থেকেও প্রমাণিত হয়, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটি কোন উচ্চতায়।’

১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শত্রুর মুখোমুখি গর্জে ওঠা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনীতি করেছেন, দেশকে স্বাধীন করেছেন। আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সবচেয়ে বড় কুশীলব ছিলেন খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান, শহীদ কর্নেল জামিল তনয়া আফরোজা জামিল, শহীদ শেখ রাসেলের সহপাঠী অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়া, নাট্যজন ম হামিদ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। সাংবাদিক ঈহিতা জলিল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠান শুরু ও শেষ হয় উপমা পালের গাওয়া দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে।