ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে ভয়াবহ অবস্থা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আন্দোলনকে (জুলাই-আগস্ট) ভিন্ন দিকে নেওয়া হচ্ছে। এমন কিছু কাজ হচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এত দিন ধরে যে ত্যাগ, প্রিয় মানুষের চলে যাওয়া, সবকিছু ছাড়িয়ে কেমন যেন একটা ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পতিত ফ্যাসিবাদ এ অবস্থা তৈরি করছে। যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তারা কেন বিভাজন তৈরি করছে, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কথা শুনলে ভয় লাগার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, পুরো আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের ৫৩ বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়নি। সব সময় যুদ্ধ, লড়াই, রক্ত ঝরানো হচ্ছে।
ফ্যাসিবাদ যেকোনো সময় ফিরে আসতে পারে, সেই আশঙ্কা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কতগুলো কাজ করছি, যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে।’
ইসকন প্রসঙ্গে ভারতের গণমাধ্যম থেকে তাঁকে প্রশ্ন করা হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের একটাই প্রশ্ন, ইসকনের ব্যাপারে কী করছেন। প্রশ্নটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটা অবস্থা তারা তৈরি করতে চায়। প্রথমবার ব্যর্থ হয়েছে। আবার তারা তৈরি করতে চায়। আমরা যেন সেখানে বিভাজন তৈরি না করি।’
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা দায়িত্বে এসেছেন। এ দায়িত্বকে দায়িত্বশীলভাবে পালন করতে হবে। জাতিকে সামনে রেখে পালন করতে হবে। এমন কোনো হঠকারী করব না যেন আবার অন্ধকারে চলে যাই।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, তা ন্যূনতম করে সে ধরনের একটা রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য নির্বাচনে যাওয়া। অনেকে বলছেন নির্বাচনই তো গণতন্ত্র নয়। অবশ্যই তা নয়। কিন্তু তার জন্য তো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
জাতি গঠনে কবি-লেখকদের বিভিন্ন সময়ে ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় সেই ভূমিকা সেভাবে দেখা যায়নি। ভয় ছিল, আতঙ্ক ছিল। যোগ্য মানুষেরা কথা বলতে পারেননি, লিখতে পারেননি। এখন লেখকদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।
লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গার কর্মকাণ্ডে দেশে একটা অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে। এ জন্য কবি-সাহিত্যিক-রাজনীতিক সবাইকে জাতীয় প্রশ্নে এক হতে হবে। কোনোভাবেই স্বৈরাচার প্রত্যাবর্তনের পথকে সুগম করা যাবে না। এ জন্য জনগণের ইচ্ছাকে মূল্য দিতে হবে। কিন্তু সেটা শুধু নির্বাচন নয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কেউ কেউ বলছে, সংস্কার শেষ না করে নির্বাচন যাবে না। যারা এ কথা বলে, তারা জনতার শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে না। জনগণ প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। সেই পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নতুন রাষ্ট্র গঠনের জন্য বিরাজমান সংস্কৃতি যথেষ্ট কি না, সে প্রশ্ন তোলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, সমাজ পরিবর্তনের জন্য সংস্কৃতির সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোরও সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। এখন দখলদারি, চাঁদাবাজি চলবে না।
চট্টগ্রামের ঘটনার কথা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, এমন উসকানি দেওয়া হচ্ছে, যা সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি। হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি তৈরি করে পশ্চিমা বিশ্বে প্রচারের চেষ্টা হচ্ছে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি; বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক; জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ; কবি ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন; জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক মোহন রায়হান; কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন; বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ; গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।