গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে: জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

যুক্তরাজ্য সফররত জামায়াত আমির আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই আহ্বান জানান। একই দিনে এর আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে যেকোনো আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে করার আহ্বান জানান তিনি।

দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত জুলাই অভ্যুত্থানের মুখ শরিফ ওসমান বিন হাদি বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালায়। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয় ছায়ানট সংস্কৃতিকেন্দ্রও।

এই পরিস্থিতিতে ফেসবুক পোস্টে জামায়াত আমির লিখেছেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে আমি বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে থাকলেও, আমার মন পড়ে আছে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে। প্রতিটি মুহূর্ত আমি দেশের খবরাখবর রাখছি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।’

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবে ধৈর্য ও অবিচলতার সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের দাবি আদায় করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারী কেউ যেন স্যাবোটাজের মাধ্যমে এ আন্দোলনকে কলুষিত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা আমাদের সবার কর্তব্য।’

ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবি ওঠার মধ্যে হামলার ঘটনাগুলোকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ হিসেবে দেখার কথা জানান জামায়াত আমির। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং প্রবীণ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা ও অপপ্রচারের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা আমাদের সবাই মিলেই নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের আমলে যেভাবে গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হামলা করা হতো, সেই সংস্কৃতিতে আমরা ফিরতে চাই না। একই সঙ্গে গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন এবং যেকোনো ধরনের ঘৃণামূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন।’

হাইকমিশন কার্যালয়সহ কয়েকটি কালচারাল সেন্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বলেন শফিকুর রহমান। ময়মনসিংহে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে এক হিন্দু যুবককে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধর্ম অবমাননা চরম অন্যায় ও গর্হিত কাজ। কেউ এই অন্যায় করলে আদালতের মাধ্যমে তাঁর বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

ময়মনসিংহের ঘটনায় ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে সন্দেহজ পোষণ করছেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, ‘এ দেশের মূলধারার সব ইসলামপন্থী দল ও সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী এবং কোনো অবস্থাতেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পক্ষে নয়। পরিকল্পিত উপায়ে স্যাবোটাজ করার জন্যই কোনো পক্ষ এ কাজ করে থাকবে বলে আমাদের ধারণা।’

দেশকে অস্থিতিশীল করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে তা প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে লেখেন জামায়াত আমির।

আরও পড়ুন

এর আগে দেওয়া বিবৃতিতে শফিকুর রহমান গণমাধ্যমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং জনগণের কণ্ঠস্বর প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।’

ওসমান হাদির মৃত্যুর পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘ক্ষোভকে পুঁজি করে কোনো পক্ষ যদি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হতে পারে।’

আরও পড়ুন