বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু দেশের মানুষই নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বও চাইছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। পরে যখন দেখল এতে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না, তখন তারা প্রয়োগ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক এসব সিদ্ধান্ত একটা স্পষ্ট বার্তা। তারা মনে করছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে না।
আন্তর্জাতিক মহলের এই বার্তা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পথে হাঁটছি। অর্থাৎ শরীরে রোগ আছে, সেটা স্বীকারই করছি না। ফলে চিকিৎসা নেওয়ার কোনো তাগিদ নেই। এই পরিস্থিতিতে সম্ভবত একটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এমনটা হলে দেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে। এর মাশুল পুরো জাতিকে দিতে হবে।
খবরে দেখলাম, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আশ্বস্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল চিঠি দিয়েছেন। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
সরকারও বারবার তাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তুলে ধরছে বলে সিইসি জানিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনও তখন আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে এখন তাদের আশ্বাস কি বিশ্বাস করবে?
বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ রয়েছে, তা থেকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামী নির্বাচনেও তা হবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি নিয়েছে, এর পেছনে অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও অনেক সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মনে করেনি যে তাদের নাগরিকদের করের টাকা খরচ করে এমন একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন আছে। ফলে শক্ত বক্তব্য দিয়ে কোনো কিছু পরিবর্তন করা যাবে না। আস্থা তৈরির জন্য সত্যিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।
বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)