ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে নির্বাচনকে না বলুন: বিএনপির আহ্বান

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীছবি: ফাইল ছবি

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ শুক্রবারও ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেছে বিএনপি। সকালে ধানমন্ডির পুরোনো ১৫ নম্বর সড়কের কাঁচাবাজারে প্রচারপত্র বিতরণের সময় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই ডামি নির্বাচন বর্জন করুন। ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে এই অবৈধ নির্বাচনকে না বলুন।’

পরে সন্ধ্যায় এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ডামি’ নির্বাচন ঘিরে দেশে এক ভয়ংকর অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।

সকালে ধানমন্ডিতে প্রচারপত্র বিতরণ শেষে রুহুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। এটি একটি ভাগ-বাঁটোয়ারা নির্বাচন, এটি একটি তামাশার নির্বাচন, এটি একটি কৃত্রিম নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের মালিক জনগণের নির্বাচন নয়। জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটি ডামি নির্বাচন করে সরকার বিদেশিদের দেখাতে চায়, দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে।’ তারা যত ষড়যন্ত্র করুক, কোনো লাভ হবে না, সরকার পার পাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হচ্ছে’ বলে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবির বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র তো আপনারাই করছেন। বাংলাদেশে ডামি নির্বাচনের আয়োজন করতে প্রতিবেশী দেশ সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। সরকার বাংলাদেশকে একটি দেশের করদ রাজ্যে পরিণত করেছে। জনগণ ওদের এই নীলনকশা সফল হতে দেবে না।’

ভোট বর্জনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ২৬ ডিসেম্বর থেকে বিএনপি সারা দেশে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণের কর্মসূচি পালন করছে। এই প্রচারপত্রে জনগণকে ভোট বর্জন ও সরকারকে অসহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ভোটের প্রচারের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রচারপত্র বিলি করছেন।

সন্ধ্যায় ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির বলেন, ভোটার উপস্থিতির অভিনব নির্বাচন দেখিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার খড়্গ থেকে রক্ষা পেতে পুরো মাফিয়া চক্র ‘ভোটার হান্টিং মিশনে’ গলদঘর্ম হয়ে পড়েছে। এরপরও ভোটকেন্দ্রে ভোটার আসবে, এমন নিশ্চয়তা পাচ্ছে না তারা।

তিনি বলেন, নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রিসাইডিং অফিসার—সব আওয়ামীময় হয়ে গেছে। তারা ছলেবলে-কৌশলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে। ভোটকেন্দ্রে না গেলে হত্যা করার, গ্রামছাড়া করার, এমনকি নাগরিক সুবিধা বাতিল করা হবে বলে হুংকার দেওয়া হচ্ছে।

‘রাতের ভোটের প্রয়োজন নেই’

‘এবার আর আগের রাতে ভোট হবে না’ বলে ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল যে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘হাবিবুল আউয়াল সাহেব জানেন, এবার আগের রাতে ভোট করার প্রয়োজন নেই। কারণ এবার তো বিরোধী দলের কেউ নেই। এবার দেশের সচেতন মানুষ জানেন, দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি সিল মারার ভোট হবে। কারণ প্রার্থীরা সবাই একদলীয় আমরা আর মামুরা।’    

‘চাপাবাজির ইশতেহার’

আওয়ামী লীগ ‘ডামি নির্বাচন’ উপলক্ষে একটি ‘চাপাবাজির ইশতেহার’ ঘোষণা করেছে বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির। তিনি বলেন, মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য এর আগেও তারা নির্বাচনী ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অতীতে কোনো প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি, বরং উল্টোটা করেছিল। ২০১৮ সালের ইশতেহারে তাদের মূল কথা ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। কিন্তু গত ৫ বছরে তাদের নিপীড়ন, গুম, খুন, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, লুটপাট আর দুঃশাসনের অগ্রযাত্রা হয়েছে। ইশতেহারে জিরো টলারেন্সের নীতি ঘোষণা করে ‘মাদক ও দুর্নীতিতে’ আকণ্ঠ ডুবে গেছে তারা।